চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর গ্রুপ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ ছাড়েন।
বর্তমান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখন সেই সময়ে নিয়ম না মেনে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একদিকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ব্যাংকটি।
এস আলমের সময়ে ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামে–বেনামে ৮০ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়। এসব ঋণ এখন সবই খেলাপি। ফলে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিপুল ঋণখেলাপির কারণে ব্যাংক মূলধনের ঘাটতিতে পড়েছে। গত জুনের শেষ পর্যন্ত মূলধনের ঘাটতি দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের দখল নেয় এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী তখন কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫১৫। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ হারানোর সময় কর্মীর সংখ্যা ২১ হাজার ৭০৬। এই সময়ে প্রায় দুই হাজার কর্মী নিয়মিত অবসর নেন। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের সময়ে ব্যাংকে প্রায় ১০ হাজার ৮৩৪ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এস আলমের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার কর্মী ছিলেন ৭ হাজার ২২৪। এর মধ্যে গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের নিজ উপজেলা পটিয়া থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মী সংখ্যা ৪ হাজার ৫২৪। কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া এসব কর্মীর কারণে এখন ব্যাংক বেকায়দায় পড়েছে।
ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এস আলমের সময়ে চার ধাপে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে ৬৩৮ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিয়োগ পান। ট্রেইনি সহকারী কর্মকর্তার দুই পদে ৩০০ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এক পরীক্ষায় শুধু চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য আবেদন খোলা হয়েছিল।
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। নতুন পরিচালনা পর্ষদ একাধিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ঋণ, বিনিয়োগ ও জনবল পরীক্ষা করে। এতে উঠে আসে এস আলমের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের অযোগ্যতা, সনদ জালিয়াতি এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম।
নিরীক্ষার পর চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০০ কর্মী ছাঁটাই করা হয়। এরপর কোনো বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পাওয়া ৫ হাজার ৩৮৫ কর্মীর যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় ব্যাংক। পরীক্ষায় ৪ হাজার ৯৫৩ জন অংশ নেননি। ব্যাংক তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি হিসেবে রাখে। ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও শাখার ক্ষতির দায়ে সাড়ে চার হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চাকরিচ্যুত কর্মীদের অবসর সুবিধা দিতে ব্যাংককে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এর মধ্যে ৭০০ কর্মী নতুন করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ব্যাংক তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অষ্ট হাজার কর্মীর মধ্যে অন্যরা নিম্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদের নিয়মিত করার জন্য মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল উদ্দীন জসীম বলেন, “২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব নিয়োগ হয়েছে, তা প্রক্রিয়া মেনে হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়নি। যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গ করে ব্যাংকের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন, তাদের বাধ্য হয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, যারা নতুন করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের বিষয় ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।