Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Wed, Oct 22, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » অর্থনীতির হৃদযন্ত্রে ফাটল, মূলধন সংকটে ২৪ ব্যাংক
    ব্যাংক

    অর্থনীতির হৃদযন্ত্রে ফাটল, মূলধন সংকটে ২৪ ব্যাংক

    কাজি হেলালOctober 21, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক গভীর অনিশ্চয়তার সঙ্কটে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহের মূল চালিকা শক্তি ব্যাংক খাত এখন মারাত্মক মূলধন ঘাটতির মুখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫ শেষে দেশের ২৪টি ব্যাংকে মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ জুন মাস শেষে দেশের ২৪টি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতির পরিমাণ গত মার্চ মাসের তুলনায় প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ এই ব্যাংকগুলো তাদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা মূলধন ধরে রাখতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতি যেমন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, তেমনি পুরো অর্থনীতির ভিত্তিও কেঁপে উঠছে।

    এই পরিস্থিতি হঠাৎ তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণ পুনঃতফসিলের অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা মিলেই আজকের এই সংকটের জন্ম দিয়েছে। ব্যাংকগুলো যেখানে উদ্যোক্তা ও শিল্প খাতকে বিনিয়োগের রক্তধারা সরবরাহ করার কথা, সেখানে এখন নিজেরাই টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। মূলধনের এই ঘাটতি কেবল ব্যাংকের হিসাবপত্রের সংখ্যা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির এক গভীর অসুস্থতার প্রতিচ্ছবি। এর প্রভাবে বিনিয়োগ কমছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি থমকে গেছে।

    অর্থনীতির এই নীরব বিপর্যয়কে উপেক্ষা করা মানে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও আস্থা সবকিছুকেই ঝুঁকির মুখে ফেলা। এখনই সময় এই সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত কার্যকর সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার। কেননা যদি অর্থনীতির “হৃদযন্ত্র- ব্যাংক খাত” অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে পুরো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দেহটিই আর সুস্থ থাকতে পারে না।

    বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন গভীর সংকটের মুখে। মূলধনের ঘাটতি, খেলাপি ঋণের পাহাড় এবং তহবিলের সংকটের কারণে কিছু ব্যাংক দেউলিয়ার পথে, যা দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি। সাধারণ মানুষ ব্যাংকে তাদের অর্থ রাখার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে এই সংকট কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; এটি দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ এবং খারাপ ঋণ পুনঃতফসিলের ফলাফল।

    মূলধনের এই ওঠানামার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ ডেফারেল সুবিধা, যার মাধ্যমে ২৮টি ব্যাংককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ পরিশোধে বিলম্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রাথমিকভাবে ঘাটতি কমেছিল, কিন্তু জুনে পুনরায় বাড়ছে। জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (CRAR) মাত্র ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। মার্চে এই অনুপাত ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। CRAR মূলতঃ একটি ব্যাংকের মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত নির্দেশ করে এবং ব্যাংকের অপ্রত্যাশিত ক্ষতি মোকাবিলা ও আর্থিক সংকট প্রতিরোধের সক্ষমতা নির্ধারণ করে।

    খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং প্রভিশন সংরক্ষণের অক্ষমতার কারণে মূলধন ঘাটতি ক্রমবর্ধমান। নিয়ম-নীতি না মেনে ঋণ বিতরণ, বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সুবিধাজনক ঋণ, এখন খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো মুনাফা থেকে যথেষ্ট প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সমস্যার তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। বিশেষভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি, যা জুনে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকায়। এরপর অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি যথাক্রমে ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি, ৪ হাজার ১৭৩ কোটি এবং ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

    বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতি ন্যাশনাল ব্যাংকের, যা ৮ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এবি ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি যথাক্রমে ৬ হাজার ৭৭৫ কোটি ও ৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, এরপর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে।

    বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি যা ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে কার্যক্রম চালানোর জন্য ন্যূনতম রক্ষিতব্য মূলধন (এমসিআর) এবং ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার (সিসিবি) রাখতে হয়। ব্যাসেল-৩ কাঠামোর আলোকে মূলধন পর্যাপ্ততা ও লিভারেজ অনুপাত বৃদ্ধির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি অনেক দূরে।

    সমস্যার গভীরতা বোঝায় যে, মাত্র ৩ মাসে মূলধন ঘাটতি লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশন ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা কমছে এবং আমানতকারীদের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই সংকট সমাধানের জন্য ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করা এবং রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে দেশের বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।

    মূলধন সংকটের মূল কারণ বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে, তা কোনো আকস্মিক সমস্যা নয়। এটি বহু বছরের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণখেলাপি সংস্কৃতি এবং বিপুল অর্থ লোপাট ও পাচারের দীর্ঘমেয়াদি ফল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেক ব্যাংক সঠিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ছাড়াই ঋণ বিতরণ করেছে। প্রভাবশালী মহলের চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্বল তদারকির কারণে এমন অনেক ঋণ অনুমোদিত হয়েছে, যেগুলো থেকে অর্থ ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ (২০২৫) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২০২৫ সালের জুন শেষে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। বর্তমানে এটি বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।

    অপরদিকে ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা ছিল বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। কিন্তু জুন ২০২৫ (সেপ্টেম্বর শেষে প্রকাশিত) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৩ শতাংশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো জানিয়েছে যে, দেশে বর্তমানে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৩ জন। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং অনৈতিক প্রশাসন এই সংকটকে আরও জটিল করেছে। অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় নীতি নির্ধারণে স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্ব হারিয়েছে। ফলে ঋণনীতি, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাস্তবতার চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে মিলেমিশে বিদেশে অর্থ পাচার ও ঋণ লুটপাটও ব্যাংক খাতকে দুর্বল করেছে। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে, যার একটি বড় অংশ ব্যাংকঋণের অর্থ।

    এই সমস্ত কারণ একত্রিত হয়ে একদিকে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ শক্তিকে ক্ষয় করেছে; অন্যদিকে খেলাপি ঋণ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থ পাচারের মতো বহুমাত্রিক দুর্নীতি ব্যাংকিং খাতের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। দেশের ২৪টি ব্যাংক বর্তমানে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে, যার সম্মিলিত ঘাটতি ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই সংকট শুধু হিসাবের দুর্বলতা নয়; এটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের গভীর কাঠামোগত দুর্বলতার এবং দীর্ঘমেয়াদি অনিয়মের প্রতিফলন, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে।

    মূলধনের সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতে নানা ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। অনাদায়ী ঋণ, তারল্য সংকট, দুর্বল প্রশাসন, জালিয়াতি এবং সাইবার নিরাপত্তার হুমকি এসব ঝুঁকি ব্যাংকিং খাতকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি শুধুমাত্র ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে না, বরং আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলাপি ঋণের উচ্চ হার ব্যাংকের মূলধন ও তারল্য ক্ষয় করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংককে কার্যকর ঋণ প্রদান ও মুনাফা অর্জনে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তারল্য সংকটও একটি বড় উদ্বেগের কারণ, যেখানে ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত নগদ তহবিল না থাকায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে সমস্যা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মুদ্রার ঘাটতি বা ডলার সংকটের সঙ্গে মিলিত হলে সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

    দূর্বল প্রশাসন, দুর্নীতি এবং নিয়ন্ত্রণহীন ঋণ বিতরণও ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে। সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব, বিশেষ করে জালিয়াতি, সাইবার হামলা এবং বাজার ঝুঁকি মোকাবিলায় অক্ষমতা ব্যাংকগুলোর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা যদি সমাধান না করা যায়, তবে ব্যাংকগুলো অপ্রত্যাশিত ক্ষতি মোকাবিলা করতে অক্ষম হবে।

    মূলধনের ঘাটতিও ভবিষ্যতের ঝুঁকির এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কমন ইক্যুইটি টায়ার ১, অতিরিক্ত টায়ার ১ এবং টায়ার ২-এর পর্যাপ্ততা না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারছে না। ফলে একধরনের আর্থিক দুর্বলতা সৃষ্ট হয়, যা সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংককে অত্যন্ত ভঙ্গুর করে তোলে।

    অন্যদিকে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পদক্ষেপ সরাসরি মূল সমস্যার সমাধান না করে বরং তা আড়াল করার একটি কৌশল হতে পারে। এতে প্রথমদিকে সমস্যার স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। তাই ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল রাখতে এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর নীতি, কঠোর নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

    সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ ও সুপারিশ: মূলধনের সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা, যেখানে পাঁচটি ব্যাংককে একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১১টি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবসম্মত পুনর্গঠন পরিকল্পনা চেয়ে ন্যুনতম সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। যদি ব্যাংকগুলো এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে সক্ষম না হয়, তবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ এটি মূলধন ঘাটতির একটি প্রধান কারণ। ব্যাংকের অদক্ষতা এবং অপচয় কমানোও অপরিহার্য; পরিচালন খরচ কমানো এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা মূলধন সংরক্ষণে সাহায্য করবে। নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার, বিশেষ করে যেসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতির মুখে আছে, যাতে বিদ্যমান মূলধন স্থিতিশীল থাকে। সরকারি ব্যাংকগুলোর অদক্ষতা ও অপচয় দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজনে দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে।

    ব্যাংকগুলোকে নিজস্বভাবে মূলধন বৃদ্ধি করার জন্য চাপ দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সহায়তা করতে পারে।পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করতে হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়ম রোধে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। শেয়ারহোল্ডারদের জবাবদিহিতা বাড়ানো, যাতে তারা ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা সহজ ও নিরাপদ করা, অদক্ষতা এবং জালিয়াতি কমাতে সাহায্য করবে। এই পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট হ্রাস পাবে এবং সামগ্রিক আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

    বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক সংকটময় সময়ের মুখোমুখি; যেখানে মূলধনের ঘাটতি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং তারল্য সংকট দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা শুধু ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, বরং সামগ্রিক বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের আস্থা, সবকিছুকে প্রভাবিত করছে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২৪টি ব্যাংক মূলধন সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা দেশের ব্যাংকিং খাতকে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

    এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই একীভূতকরণ, পুনর্গঠন পরিকল্পনা এবং প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন মূলধন বৃদ্ধির পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়, অদক্ষতা ও অপচয় কমানো, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সাইবার ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা। এই পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যায়।
    সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাংকিং খাতের এই সংকট কেবল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা নয়; এটি দেশের অর্থনীতির হৃদযন্ত্রে ফাটল। সময়মতো কার্যকর ও সুসংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই ফাটল বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই এখনই সময় সংকট চিহ্নিত করা, দায়িত্বশীল নীতি প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়নের; যাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও জনসাধারণের আস্থা সুদৃঢ়ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা যায়।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    ব্যাংক

    খুদে শিক্ষার্থীদের ছোট সঞ্চয় থেকে বড় স্বপ্ন

    October 22, 2025
    ব্যাংক

    টেকসই অর্থনীতি বিনির্মাণে স্কুল ব্যাংকিং অপরিহার্য

    October 22, 2025
    ব্যাংক

    বাংলাদেশ ব্যাংকে মেধাভিত্তিক ইনক্রিমেন্ট পুনরায় চালু

    October 22, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.