বাংলাদেশ ব্যাংক মেধাবী কর্মকর্তাদের ধরে রাখতে ও নতুন যোগ্য কর্মকর্তা আকৃষ্ট করতে আবারও মেধার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট বা বোনাস চালু করেছে। এবার গ্রেড-৯ ও গ্রেড-১০ পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী সর্বোচ্চ চারটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাবেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২-এর পরিচালক নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত একটি অভ্যন্তরীণ সার্কুলারে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগদানের শুরু থেকেই অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্টের যোগ্য হবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বকেয়া ইনক্রিমেন্টসহ এটি প্রদান করা হবে।
শিক্ষাজীবনের চারটি ধাপে—এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—যদি কোনো কর্মকর্তা চারটি প্রথম শ্রেণি বা বিভাগ অর্জন করে থাকেন, তারা তিনটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাবেন। তিনটি প্রথম শ্রেণি বা বিভাগের জন্য দুইটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট মিলবে। নিয়মিত বছরে একবার (৫ শতাংশ হারে) প্রদত্ত ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে এই মেধাভিত্তিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হবে। এর পাশাপাশি, যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর অর্জন করবেন, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ কর্মকর্তাকে আরও একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে। ফলে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পাঁচটি ইনক্রিমেন্ট উপভোগ করতে পারবেন।
সূত্র জানায়, আগে থেকে নবম ও দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট পেতেন। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি ব্যাচের জন্য এই সুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর বিষয়টি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪৩৮তম সভায় এটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যদি কোনো কর্মকর্তা যোগদানের পরপরই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে না পারেন, পরে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনক্রিমেন্ট বকেয়াসহ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ইনক্রিমেন্ট বন্ধ থাকায় তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও কর্মপ্রেরণা কমে গিয়েছিল। মেধাভিত্তিক ইনক্রিমেন্ট পুনরায় চালু হওয়ায় কর্মীদের উৎসাহ ও মনোবল বাড়বে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কিছু সুবিধা কমে যাওয়ায় অনেকে সুযোগ পেলেই অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছিলেন। মেধাভিত্তিক ইনক্রিমেন্ট পুনরায় চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে যোগ্য কর্মকর্তাদের ধরে রাখা সহজ হবে এবং নতুন মেধাবীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসনিক দক্ষতা ও পেশাগত মান আরও উন্নত করবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে ৫৭ জন কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছাড়েন। তাদের মধ্যে একজন উপপরিচালক, একজন অফিসার এবং বাকিরা সহকারী পরিচালক।

