ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর সরকার এখন থেকে নতুন হারে আবগারি শুল্ক কেটে রাখবে। আগে এক লাখ টাকার বেশি থাকলে শুল্ক দিতে হতো। এখন থেকে তিন লাখ টাকার বেশি থাকলেই তা কাটা হবে। গত জুনে ঘোষিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই পরিবর্তন আনা হয়। এতে ব্যাংক গ্রাহকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের হিসাব থেকে শুল্ক কেটে নেয়। এ সময় মুঠোফোনে টাকা কেটে নেওয়ার বার্তা এলেও অনেকেই বুঝতে পারেন না, কেন এই অর্থ কাটা হচ্ছে। আবগারি শুল্ক একধরনের পরোক্ষ কর। সরকার এটি নির্দিষ্ট পণ্য, সেবা বা আর্থিক কার্যক্রমের ওপর আরোপ করে। যেমন—ব্যাংকে টাকা রাখা, মোবাইল ফোনে কথা বলা বা সিগারেট কেনা। এটি আয় বা মুনাফার ওপর নয়, বরং কোনো সুবিধা ব্যবহারের ওপর বসে। কোনো গ্রাহকের হিসাবে বছরে অন্তত একবার তিন লাখ টাকা বা তার বেশি টাকা থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। অর্থাৎ হিসাবের স্থিতি বা ব্যালান্সের ওপর ভিত্তি করেই শুল্ক নির্ধারিত হয়।
কত টাকা থাকলে কত শুল্ক:
- তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো শুল্ক নয়।
- তিন লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে হলে ১৫০ টাকা।
- ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৫০০ টাকা।
- ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৩ হাজার টাকা।
- ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে হলে ৫ হাজার টাকা।
- ১ কোটি ১ টাকা থেকে ২ কোটি টাকার মধ্যে হলে ১০ হাজার টাকা।
- ২ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার মধ্যে হলে ২০ হাজার টাকা।
- ৫ কোটি টাকার বেশি হলে ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।
জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোনো হিসাব একবারও যদি তিন লাখ টাকা বা তার বেশি স্থিতি ছোঁয়, তাহলে শুল্ক কাটা হয়। একাধিকবার সেই সীমা অতিক্রম করলেও শুল্ক একবারই দিতে হয়। একজন গ্রাহকের একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলে, প্রতিটি হিসাব থেকে আলাদাভাবে শুল্ক কাটা হয়। উদাহরণ হিসেবে, কারও তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ টাকা করে থাকলে, প্রতিটি থেকে ১৫০ টাকা করে মোট ৪৫০ টাকা কাটা হবে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ কার্যদিবসে এই টাকা কাটা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও কাটা পড়ে। সঞ্চয়ী, চলতি, এফডিআর, ডিপিএস বা বেতনভিত্তিক—প্রায় সব ধরনের হিসাব থেকেই আবগারি শুল্ক কাটা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই শুল্ক আদায় করে, ব্যাংকগুলো তার পক্ষ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, উচ্চ আয়ের গ্রাহকদের করজালে আনা, ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা।

