বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এক অনিশ্চিত সময় পার করছে। একদিকে ঋণখেলাপির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ দিন দিন গভীর হচ্ছে। বহু ব্যাংক এখন তারল্য সঙ্কটে, পুঁজির ঘাটতিতে ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় জর্জরিত। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি নতুন, শক্তিশালী ও কার্যকর আর্থিক কাঠামো গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আর্থিক ব্যবস্থায় মানুষের বিশ্বাস পুনর্গঠন করা।
কিন্তু এই পথ মোটেও সহজ নয়। একীভূত ব্যাংকের স্বপ্ন যতই বড় হোক না কেন, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা ফেরানো। কারণ ব্যাংক শুধুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি মানুষের সঞ্চয়ের আশ্রয়স্থল, অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং রাষ্ট্রের আর্থিক বিশ্বাসের প্রতীক। যদি সেই বিশ্বাস একবার ভেঙে যায়, তা ফিরিয়ে আনতে লাগে সময়, স্বচ্ছতা ও সুশাসনের নিরলস প্রয়াস। তাই আজ প্রশ্ন একটাই, একীভূত ব্যাংকের এই নতুন সূচনা কি সত্যিই আস্থার পুনর্জন্ম ঘটাতে পারবে, নাকি এটি কেবল আরেকটি তাত্ত্বিক সংস্কার হয়ে থাকবে?
ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ একাধিক সংকটের সম্মুখীন। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ (Non-performing loans -NPLs) দ্রুত বেড়ে গেছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তারল্য সংকট, আমানত ও ঋণ-উপাত্তের দুর্বলতা। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে খাতের মোট ঋণের প্রায় ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই হারে শুধু ব্যাংকের আয়-ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো খেলাপি ঋণ শুধু সংখ্যার খেলাই নয়, এটি ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে, ঋণ পরবর্তী পর্যায়ে রূপ নিচ্ছে, নতুন আমানত সংগ্রহ ও বর্তমান ঋণ পরিশোধ দু’টোর ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। এই দুর্বলতায় যুক্ত হয়েছে ব্যাংক-পরিচালনায় দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার অভাব। এক-দুই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বড় কর্পোরেট গোষ্ঠীর ঋণ-অবধি অব্যহতি বা তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকি বাড়ছে এবং আমানতকারীর কথিত “আমার টাকা নিরাপদ আছে কি না”-সংশয় ক্রমশই বাড়ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শুধু ব্যাংকগুলোর সংখ্যা বা একীকরণ করলেই কাজ হবে না; স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কারণ দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত একটি মুখ্য ধাপ, তার ঘাটতি হলে অন্য ধাপগুলোও উত্তেজিত-অস্থির হয়ে পড়ে। সংক্ষেপে বলা যায়, বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চিত্র সেভাবে নয় যে, শুধুই “একটি বড় সংস্কার” হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বরং দেখার বিষয় হবে, কিভাবে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠা যায়, পরিচালন দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো যায় এবং সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের ব্যাংকে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়।
একীভূতকরণের উদ্যোগ ও কারণ: বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এক সংকটমুখী সময় অতিক্রম করছে। খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা মিলে অনেক ব্যাংকের কার্যক্রম স্থিতিশীলতার বাইরে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার লক্ষ্য হলো শুধুমাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি নয়; বরং একটি শক্তিশালী, টেকসই এবং পরিচালনায় দক্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। একীভূতকরণের মাধ্যমে ছোট ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা দূর করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ব্যয় কমানো, কার্যকারিতা বৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবহার এবং বাজারে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সাম্প্রতিক পরিকল্পনায় পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংক একত্রিত করে একটি বড় ব্যাংক গঠনের কথা বলা হচ্ছে, যার সম্পদ হবে প্রায় ২ দশমিক ২০ লক্ষ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য শুধু আর্থিক স্থিতিশীলতা নয়; এটি সাধারণ আমানতকারীর আস্থা পুনর্গঠন এবং শেয়ারহোল্ডারদের দীর্ঘমেয়াদি মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক কথায় একীকরণ হলো ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলার এক বড় প্রক্রিয়া, যা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ, তারল্য ঘাটতি এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা মিলিয়ে অনেক ব্যাংকের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একত্রিত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, যার নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও পরিচালনায় দক্ষ ব্যাংক তৈরি করা, যা দেশের আর্থিক কাঠামোকে আরও মজবুত করতে সক্ষম হবে।
একীভূত ব্যাংকটি শক্তিশালী মূলধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যার ফলে তারল্য সংকট কাটানো এবং ঋণ প্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে এটি ছোট ও মাঝারি আমানতকারীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, যা তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে। একাধিক দুর্বল ব্যাংককে একত্রিত করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে এবং পরিচালন খরচও হ্রাস পাবে, যা ব্যাংকের কার্যকারিতা ও মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশেষভাবে ইসলামী ব্যাংকিং খাতে এই ধরনের একীভূত উদ্যোগ একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে, যেখানে শরীয়াহ-অনুমোদিত ব্যাংকিং আরও মজবুত হবে।
যদিও উদ্যোগটি স্বপ্নময় এবং সম্ভাবনাময়, তবু এর সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সুনিশ্চিত পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সমর্থনের ওপর। একীকরণের মাধ্যমে গঠিত এই নতুন ব্যাংক যদি কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এটি কেবল একটি শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানই হবে না; বরং দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হবে।
কিন্তু এর আসল চ্যালেঞ্জ হলো ব্যাংকিং খাতে জনগণের ‘আস্থা’ ফেরানো’। তবে সুযোগ যতই বড় হোক, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা পুনরুদ্ধার। যেটা সহজ নয় কারণ নীচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে-
*আমানতকারীর নিরাপত্তা ও প্রতিশ্রুতি: সাধারণ মানুষের প্রথম প্রশ্ন হয় “আমার টাকা নিরাপদ কোথায়?” খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকের দুর্বল প্রেক্ষাপটের কারণে এই প্রশ্ন ভর করে রয়েছে। যখন বলা হচ্ছে, ২ লাখ টাকার নিচে আমানতকারীদের প্রথমে ফেরত দেওয়া হবে, তাতে বাংলার সাধারণ মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত কিন্তু পুরোপুরি নয়। এই ধরনের “প্রাথমিক সুরক্ষা” সাইন করে হলেও, এর পরের ধাপ যেমন: ২ লাখ টাকার উপরের আমানত কিভাবে ফেরত হবে, এটা স্পষ্ট নয়। তথ্য অনুযায়ী, ২ লাখ টাকার উপরের আমানত ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এই অসমর্থতা বা অস্পষ্টতা আস্থা ফেরানোর পথে বাঁধা।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি: ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, স্বজনপ্রীতি, বোর্ড-পরিচালনায় দুর্বলতা ইতিমধ্যে চিহ্নিত। একীভূতকরণ হলেও যদি নতুন ব্যাংকের পরিচালনায় একই ধরনের দুর্বলতা, নিয়ন্ত্রণশীল নিয়োগ বা স্বজনবাহী নিয়োগ হয়, তাহলে আস্থা ফেরানোও মুশকিল। যেমন: একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে “যদি একটি তুলনামূলক ভালো ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হয়, তাহলে তার ব্যালান্স-শিটেও দুর্বল ব্যাংকের প্রভাব পড়বে। এতে আমানতকারীদের আস্থা কমবে।”
উৎকর্ষতা ও পরিচালন দক্ষতা: একীভূত হওয়া মানেই সকল সমস্যার সমাধান হওয়া নয়। নতুন ব্যাংক-মডেল সেটআপ, শাখাগুলো একীভূত, কর্মী ও ব্যবস্থাপনায় পুনর্বিন্যাস ইত্যাদিতে সময় ও খরচ লাগবে। বিশেষ করে যেখানে পাঁচটি ব্যাংক এক সাথে যুক্ত হচ্ছে, তাই পরিচালনায় জটিলতা বাড়বে। এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে “ধীরে ধীরে ব্যাংকের শাখার পুনর্বিন্যাস হতে পারে, জনবল কমানো হতে পারে, এতে ৩ বছর লাগতে পারে”। তাই সময় নিয়ে হলেও, দ্রুত ও দক্ষভাবে এই পুনর্গঠন না হলে সাধারণ মানুষ ধৈর্য হারাতে পারে।
সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ: একাধিক ব্যাংকে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, তহবিল পাচারের অভিযোগ রয়েছে। একীভূতকরণের আগে এসব দুর্বলতার মূলে নজর দেওয়া জরুরি, নাহলে শুধু একত্রিত করায় সমস্যা দূরীভূত হবে না; বরং বড় রূপ নিতে পারে। বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, একীভূতকরণ “সমস্যার একীকরণ” হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ সংস্কার না হয়।
নিয়ন্ত্রক এবং নীতিগত পরিবেশ: ব্যাংক একীকরণ সফল করতে হলে শুধু ব্যাংক-পরিচালনায় পরিবর্তন নয়, নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত সংস্কারও জরুরি। যেমন: মূলধন পর্যাপ্ততা (Capital Adequacy) আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আনতে হবে। এক সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছে, যেখানে ব্যাসেল–৩ অনুযায়ী ১২ দশমিক ৫০ % মূলধন সংরক্ষণ প্রয়োজন, সেখানে দেশের কিছু ব্যাংকে আছে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
তদারকি শক্তিশালী করা, আর্থিক তথ্য প্রকাশ বাড়ানো, স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি, সবই ব্যাপক চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তী করণীয় ও সুপারিশ: আমানতকারীর আস্থা ফেরাতে এবং একীকরণ সফল করতে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ-
স্বল্প আমানতকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া: প্রথম ধাপে ২ লাখ টাকার নিচে আমানতকারীদের ফেরত নিশ্চিতে রাজি হওয়া ভালো পদক্ষেপ। তবে ২ লাখ টাকার উপরের ক্ষেত্রে সময়সীমা, ধাপে ধাপে ফেরতের রূপরেখা আগেই ঘোষণা করা জরুরি।
স্বচ্ছতা বাড়ানো: নতুন ব্যাংকের গঠন, সম্পদ-দায় হস্তান্তর, শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থা, পরিচালনা পর্ষদের রীতি, সব কিছু খোলামেলা ভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত।
নির্বাহী ও পরিচালন দক্ষতা: নতুন ব্যাংকের পরিচালনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকার, সৎ, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড, নিরপেক্ষ নিয়োগ ও তদারকি নিশ্চিত করা জরুরি।
খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকি হ্রাস: একীকরণের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ ঋণ হ্রাস, অ্যাসেট রিকভারি, দুর্নীতি-নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছ অডিট ব্যবস্থা দ্রুত চালু করতে হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্কার: বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সক্রিয় হতে হবে, ব্যাংক রেজল্যুশন আইন ও তদারকি মেকানিজম শক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (যেমন: ব্যাসেল–৩) অনুসরণ ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
জনসচেতনতা ও যোগাযোগ: সাধারণ জনগণকে ব্যাংকের নতুন একীকরণ-প্রক্রিয়া, তাদের অধিকার-দায়িত্ব, আমানতের নিরাপত্তার রূপকথা নয়, বাস্তবতা জানিয়ে সচেতন করতে হবে। এর ফলে আস্তে আস্তে আস্থা বাড়বে।
“একীকৃত ব্যাংক স্বপ্ন” ধারণাটা আদৌ কম নয়, একটি শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা, যা বেশি নিরাপদ, অধিক দক্ষ এবং সাধারণ মানুষের জন্য বিশ্বাসযোগ্য হবে, এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য বড় অর্জন হতে পারে। তবে সেই স্বপ্ন সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করে রয়েছে আস্থা-র ওপরে। সাধারণ মানুষ যদি ব্যাংকে তাদের আমানত রেখে শান্তিতে ঘুমাতে না পারে, তাহলে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
এই মুহূর্তে দেশের সামনে বড় সুযোগ রয়েছে, যে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীকরণের পথে এগুচ্ছে, তা শুধু একটি রূপান্তর নয়, একটি বিশ্বাসের পুনর্নির্মাণের অভিযান হতে পারে। তবে সে উদ্দেশ্য সফল করার জন্য দরকার সুশাসন, জবাবদিহি, দক্ষতা ও সময়। যদি সেসব না হয়, তাহলে একীকরণের পরে সমস্যাগুলো শুধু বড় রূপেই ফিরে আসবে। আমরা আশা করি বর্তমান এই দীর্ঘ সংকটের পর এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের মনে “আমার টাকা নিরাপদ”-এর অনুভূতি ফিরিয়ে আনবে। ব্যাংক খাত সত্যিই একীভূত হলেও, শেষ পর্যন্ত আসল একীকরণ হবে আস্থা একীকরণ।

