আকিজ রিসোর্স লিমিটেড নতুন একটি শরিয়াভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকের প্রস্তাবিত নাম ‘মুনাফা ডিজিটাল ব্যাংক’। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর হারানো গ্রাহক পুনরুদ্ধার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজে ঋণ পৌঁছানোই এর মূল লক্ষ্য। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ বিদেশি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানও এ উদ্যোগে অংশীদার হিসেবে যুক্ত থাকবে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আকিজ হাউসে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আকিজ রিসোর্স এ তথ্য জানায়।
সভায় জানানো হয়, ‘মুনাফা ডিজিটাল ব্যাংক’ টাকা স্থানান্তরে কোনো খরচ নেবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আবাসন ঋণেও গুরুত্ব দেবে প্রতিষ্ঠানটি। শিগগিরই ব্যাংকটির অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হবে।
আলোচনায় আকিজ রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ জসিম উদ্দিন বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন পেলে দেশের আর্থিক খাতে পরিবর্তন আনব। গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষকদের কাছে সহজে ঋণ পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, “আকিজ রিসোর্স বিশ্বাস করে ব্যাংকিং শুধু লেনদেন নয়, এটি মানুষের আর্থিক ক্ষমতায়ন ও সামাজিক অগ্রগতির হাতিয়ার। আমাদের ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এমন একটি শরিয়াভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংক গড়ে তুলব, যা প্রযুক্তি, নৈতিকতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।” শেখ জসিম উদ্দিন জানান, আকিজ গ্রুপের ৮৫ বছরের ঐতিহ্য ও সুনামের ভিত্তিতেই তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। “শুধু ইসলামি ধারার ব্যাংক হিসেবেই আমরা কাজ করব,” যোগ করেন তিনি।
সভায় জানানো হয়, আকিজ গ্রুপ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আকিজ রিসোর্স। তখন কর্মী ছিল তিন হাজার এবং প্রতিষ্ঠানের মূল্য ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এর অধীনে ৪০টি প্রতিষ্ঠান, কর্মী প্রায় ১০ হাজার এবং মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি এখন লজিস্টিক, প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য, ট্রেডিং, কৃষি, সেবা, প্রকৌশল, অটোমোবাইল, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য ও নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সব কার্যক্রমেই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, কাগজের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। এই অভিজ্ঞতাই ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনায় কাজে লাগাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আকিজ রিসোর্সের চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার তৌফিক হাসান, চিফ ডিজিটাল ও ইনোভেশন অফিসার ফিরোজ কবির, চিফ পিপল অফিসার মোহাম্মদ আফসার উদ্দিন এবং আকিজ আই-বিওএসের সিইও এস কে মো. জায়েদ বিন রশিদ।
এদিকে বেসরকারি খাতের প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সও যৌথভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে কোম্পানিটি জানায়, অনুমোদন পেলে প্রস্তাবিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তাদের ৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে। বিকাশ লিমিটেড, বাংলালিংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা:
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম, সিডিএম বা সিআরএম থাকবে না। সব সেবা দেওয়া হবে মোবাইল অ্যাপস বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
গ্রাহকরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করতে পারবেন। ব্যাংকটি ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা চালু করতে পারবে। তবে এটি কোনো প্লাস্টিক কার্ড দেবে না। গ্রাহকেরা চাইলে অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্টের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না এবং বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার অনুমতি থাকবে।

