ঢাকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ারদর গত এক মাসে অস্বাভাবিক ওঠানামা করছে। ঋণ অনিয়মে জর্জরিত এসব ব্যাংককে বাঁচাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পূরণ হবে না— এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ নিশ্চুপ রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্রমাগত দরপতনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে মাত্র সাত থেকে আট কার্যদিবসে এসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম হঠাৎ দ্বিগুণ হয়। এরপর ফের দরপতনে ২০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা হতাশ। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না, একীভূতকরণ হলে তারা কিছু পাবেন কিনা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের প্রাথমিক ঘোষণায় স্পষ্ট বলা হয়, একীভূত ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা আপাতত কোনো অর্থ বা ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এমনকি গত ৯ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ছিল না।
তবে ১৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির গুজব ছড়াচ্ছে। সরকার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের স্বার্থ রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, একীভূতকরণের খবরেই প্রথমে শেয়ারদর তলানিতে নেমেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর একই শেয়ারগুলো দ্রুত দাম বাড়ায়। এক পর্যায়ে দ্বিগুণ হওয়ার পর ফের বড় পতনে পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর নেমেছিল দুই টাকা ৮০ পয়সায়। ৭ অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ২০ পয়সায়— বৃদ্ধির হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। এরপর ফের দরপতনে গত বৃহস্পতিবার দাম নেমে আসে তিন টাকা ৩০ পয়সায়। তবে নতুন গুজবে শেষ লেনদেনে শেয়ারদর কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় তিন টাকা ৭০ পয়সায়।
একই ধারা দেখা গেছে অন্য চার ব্যাংকেও। ফার্স্ট সিকিউরিটির শেয়ারদর সাত দিনে দ্বিগুণ হয়ে ফের ৩৩ শতাংশ কমেছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দর ৮৫ শতাংশ বেড়ে ২১ শতাংশ কমে গেছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দর ১০৭ শতাংশ বাড়ার পর ৪৫ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ৭১ শতাংশ বাড়ার পর ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একীভূতকরণের ঘোষণার পরই বিএসইসির উচিত ছিল এসব ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত করা। কারণ ব্যাংকগুলোর স্বতন্ত্র অস্তিত্বই থাকছে না, এমন অবস্থায় লেনদেন চালু রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোরও এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনি ক্ষমতা ছিল। কিন্তু কোনো সংস্থাই এখন পর্যন্ত এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। জানা গেছে, ব্যাংক একীভূতকরণ পরিকল্পনাবিষয়ক সরকারি কমিটিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “যখনই সিদ্ধান্ত হয় যে ব্যাংকগুলো একীভূত হবে, তখনই এসব ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত করা উচিত ছিল। এই দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ উভয়ের।” তিনি আরও বলেন, “সরকার লিখিতভাবে জানিয়েছে লোকসানি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা কিছুই পাবেন না, তারপরও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হচ্ছে— এটা পরস্পরবিরোধী। যারা এমন মন্তব্য করেছেন, তাদের দায় নিতে হবে। শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গা; এখানে দায়িত্বহীন মন্তব্য, আশ্বাস বা নীরবতা— কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়।”

