বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক অনাপত্তি জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, “আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। এখন ফরমান আর চৌধুরীর এমডি হিসেবে থাকার কোনো সুযোগ নেই।”
ফরমান আর চৌধুরীর বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গত ১৩ এপ্রিল তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ব্যাংক। পরবর্তী তদন্তে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে পরিচালনা পর্ষদ তার অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমডিকে অপসারণের কারণ হিসেবে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন, নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখে মুনাফা দেখানো, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, সিএসআর তহবিলের অপব্যবহার এবং বেতনের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে ফেরত না দেওয়াসহ নানা অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুস সামাদ লাবু। তবে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটির পুরোনো পর্ষদ ভেঙে দেয় এবং নতুন ৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। লঙ্কা বাংলা ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি খাজা শাহরিয়ারকে নতুন পর্ষদের প্রধান করা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন পর্ষদ ব্যাংকটিতে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি খুঁজে পায়।
তদন্তের সময় ফরমান আর চৌধুরীর পাশাপাশি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নাদিম, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো. আব্দুল মবিনকেও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে অন্য তিন কর্মকর্তা এখনো ছুটিতে আছেন বলে জানা গেছে।
সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে বড় ধরনের পুনর্গঠন চলছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে বিশেষ অডিটও চলছে।

