বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে ব্যাংক টু এমএফএস (মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি)-এর মধ্যে একক আন্তপরিচালনযোগ্য লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছিল, কিন্তু তৎকালীন সরকারের চাপে পরবর্তীতে এই প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করতে হয়েছিল। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি এটি পুনরায় চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক সংস্কার সম্মেলন ২০২৫’-এর ‘ক্যাশলেস ইকোনমি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব তথ্য জানান। বিগত আওয়ামী সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসপি প্ল্যাটফর্মের বিপরীতে ‘বিনিময়’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আনার উদ্যোগ নেয়। আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিইএ) প্রায় ৬৫ কোটি টাকা খরচে এটি তৈরি করে। তবে বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের আমলে এই প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, “আমরা এনপিএসপি-র মাধ্যমে আন্তপরিচালনযোগ্য লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতেই সরকার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজনৈতিক কারণ ও নীতিগত কারণে আমাদের অগ্রগতি থামাতে হয়েছিল। এক নীতিনির্ধারক বলেছিলেন—‘সেন্ট্রাল ব্যাংকের স্বাধীনতা কেন প্রয়োজন?’—এটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।” তিনি আরও জানান, “এবার আমরা একটি ‘উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক’ মডেল নিয়ে এগোচ্ছি। ব্যাংক ও পেমেন্ট সেবা প্রদানকারীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেবা দেবে। ফলে গ্রাহকদের খরচ কমবে।”
বর্তমানে ব্যাংক-টু-ব্যাংক লেনদেনে চার্জ প্রায় ১ টাকা। এর মধ্যে ৮৫ পয়সা ভিশন বা নেটওয়ার্ক ফি হিসেবে যায়। রাশেদ বলেন, “প্রতিযোগিতা বাড়লে চার্জ আরও কমে আসবে। মূল লক্ষ্য হলো লেনদেন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।” তিনি বলেন, “গ্রাহক নিজেই ঠিক করবেন তিনি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন নাকি ওয়ালেটে রাখবেন। আমরা চাই মানুষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে উৎসাহী হোক। বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাব মিলিয়ে প্রায় ২৪ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। রাশেদ আশা করছেন, আগামী মাসের মধ্যে শীর্ষ মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোও প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, “বর্তমানে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া তুলনামূলক জটিল। অ্যাকাউন্ট নম্বর, নাম ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। আমরা চাই এটি আরও সহজ হোক। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এক ক্লিকে লেনদেন করা যাবে।”
আগামী বছরের মধ্যে একক ‘বাংলা কিউআর কোড’ চালুর লক্ষ্য রয়েছে। প্রতিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ওয়ালেটের জন্য একটি ইউনিক কিউআর কোড থাকবে। যেকোনো ব্যাংক বা এমএফএস গ্রাহক এই কিউআর কোড স্ক্যান করলেই টাকা পাঠাতে পারবেন। প্রায় ১০ কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ‘বাংলা কিউআর কোড’ চালু হলে বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

