অঙ্গীকারনামার বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থার প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসে জানিয়েছে, ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ার আগে বিভিন্ন শর্ত পূরণের অগ্রগতি ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে কোনো সিকিউরিটিজ ছাড়াই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া ধার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা পৌঁছেছে।
গতকাল বুধবার আইএমএফ প্রতিনিধি দল অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর এবং নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধি দল বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে। সাধারণত, টাকার সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল বা সরকারি বন্ডের মতো সিকিউরিটিজের বিপরীতে ধার দেওয়ার প্রথা আছে। এর বাইরে গিয়ে কেবল অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকে ধার দেওয়া সমস্যার কারণ হতে পারে। এতে বাজারে অতিরিক্ত টাকার সরবরাহ বাড়তে পারে এবং টাকা ফেরত নেওয়ার বিষয়েও অনিশ্চয়তা থাকে।
তবে, দুর্বল ব্যাংকে ধার দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকলেও আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের খসড়া অনুমোদন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং কিছু আইন সংশোধনের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি সন্তোষজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শর্ত বাস্তবায়ন এবং আর্টিকেল ফোর অনুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে। মিশনটি দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং অর্থনৈতিক নীতি ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করবে। পর্যালোচনার শেষে তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। প্রতিবেদনের লক্ষ্য দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নকে সহায়তা করা।
মিশনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। সফরের প্রথম দিন গতকাল বুধবার তারা অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করে মিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। প্রতিনিধি দল অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট শাখার সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছে। বৈঠকে কর-রাজস্ব আদায় এবং উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় লক্ষ্য অর্জনে বাধা, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও কিছু প্রকল্পের সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি ঠিক হচ্ছে। এছাড়া ভর্তুকি কমানো এবং রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা কমানোর পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আইএমএফের আর্টিকেল ফোর অনুযায়ী, সংস্থার প্রতিনিধি দল বা মিশন বিভিন্ন সময়ে সদস্য দেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে প্রস্তাবনা দেয়। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০২৩ সালে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, যা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলোর সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।

