দেশের ব্যাংক খাতে মোবাইল অ্যাপ, ডিজিটাল লেনদেন ও বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় সাইবার হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ইজিডিআই)-এ বাংলাদেশ এখনও ১০০তম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংক সাইবার হামলা প্রতিরোধে সক্ষম নয়। ২০২৩-২৪ সালে ব্যাংক খাতে অন্তত ১৩ ধরনের সংঘবদ্ধ সাইবার হামলা শনাক্ত করা হয়েছে। হামলাগুলোতে নিরাপত্তা দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এপিটি বা গুপ্ত হামলা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এছাড়া নন-ভালনারেবিলিটি, ম্যালওয়্যার, ম্যালিশিয়াস টার্মিনাল, এক্সএসএস, এসকিউএল ইনজেকশন, ব্যাকডোর ইনস্টলেশন, স্পিয়ার ফিশিং, র্যানসমওয়্যার, রুটকিট, ক্লিকজ্যাকিং এবং ডিডিএস হামলাও ঘটেছে।
২০১৯ সালে ব্যাংক খাতে ৫ হাজার ৮৭৫ জন আইটি কর্মী ছিল। ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকগুলোর ওপর প্রতিদিন ১৪৫ থেকে ৬৩০টি সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ক্যাসপারস্কি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ৭ লাখের বেশি সাইবার হামলার হুমকি শনাক্ত করেছে। এটি ২০২২ সালের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘বিশ্বে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ইন্টারনেট সংযোগও বাড়ছে। তবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি। আমাদের দেশে মনিটরিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মী নেই। এআই যুগে ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। এখনই সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।’
ক্যাসপারস্কি ল্যাবের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মহাব্যবস্থাপক ইয়েও সিয়াং টিয়ং জানান, ‘বেসিক ফায়ারওয়াল ও এন্ডপয়েন্ট সলিউশন এখন যথেষ্ট নয়। ডিজিটাল অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে হবে।’
আস্তোনিয়া ভিত্তিক ই-গভর্ন্যান্স একাডেমি ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে (এনসিএসআই) দেখা গেছে, বিশ্বের ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাতে প্রযুক্তি উন্নতি হলেও নিরাপত্তায় যথেষ্ট নজরদারি না থাকায় হামলা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক স্বাক্ষর শতাব্দ বলেন, ‘প্রযুক্তির যুগে সাইবার হামলার ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষিত নাগরিকরাও বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস থেকে তথ্য চুরি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সচেতনতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।

