গতকাল শনিবার থেকে দেশে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন (এমএফএস), ব্যাংক এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি)দের মধ্যে আন্তলেনদেন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবা চালু হলেও সবচেয়ে বড় দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ এখনও সেবায় যুক্ত হতে পারেনি। রকেটও এখনো সেবাটি চালু করতে পারেনি। ফলে ব্যবহারকারীর বড় অংশ এখনো এই সুবিধার বাইরে রয়েছে।
বিকাশ জানিয়েছে, তারা সেবা চালুর চেষ্টা করছে এবং যেকোনো সময় গ্রাহকরা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যদিকে নগদ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি, তাই সেবা চালু করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, “বিকাশ সেবা চালু করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স না থাকার কারণে নগদকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই ইতোমধ্যে সেবা ব্যবহার করছে। আশা করি শিগগির সবাই এটি চালু করতে পারবে।” গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছিল, নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবির) অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস ও পেমেন্ট সেবাদাতার মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পিএসপি ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করেছে।
কারা চালু করতে পেরেছে: বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই সেবা চালু করেছে। এতে রয়েছে:
- ইসলামী ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ
- ব্র্যাক ব্যাংক
- ইস্টার্ন ব্যাংক
- পূবালী ব্যাংক
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক
- রকেট
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট
এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেবল টাকা জমার সুবিধা চালু হয়েছে। তবে এসব ব্যাংক থেকে টাকা পাঠানোর সুবিধা এখনও নেই। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান জমা ও পাঠানো—উভয় সুবিধা চালু করেছে। বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তলেনদেন সেবা চালুর উদ্যোগে যুক্ত আছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করি এই সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ করবে। আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হলো শক্তিশালী অথেনটিকেশন ও স্তরভিত্তিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর দ্রুতই গ্রাহকরা সেবা পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।”
নগদের কর্মকর্তারা জানান, এনপিএসবির সঙ্গে সংযোগের জন্য কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও মাশুল নির্ধারণ, কারিগরি কমিটি সব সভায় তারা উপস্থিত ছিলেন। তবুও সংযোগ না পাওয়ায় সেবা চালু করা যায়নি। রকেটের কর্মকর্তারা জানান, “ছুটির কারণে এখনো সেবা চালু করা যায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি রোববার থেকে এটি শুরু হবে।”
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস বা পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে সর্বোচ্চ ১.৫০ টাকা মাশুল দিতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে সেবা দিতে পারবে। বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এক হাজার টাকা পাঠালে খরচ সর্বোচ্চ ৮.৫ টাকা। আর যেকোনো পিএসপি থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ হবে দুই টাকা।

