সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি বৃহৎ ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী বুধবার এসব ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রশাসক নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করা হবে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) চুক্তি বাতিল করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে একীভূতকরণের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এক্সিম ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীতে মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামীতে মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে মোহাম্মদ আবুল হাসেম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
প্রশাসকদের মূল কাজ হবে ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা। সেনা কল্যাণ ভবনে এই প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সমন্বয় কার্যালয় স্থাপন করেছে। সেখানে কর্মকর্তারা নতুন ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর কাঠামো গঠনে তথ্য সংগ্রহ ও সমন্বয়ের কাজ করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় এক বছর ধরে পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। ইতোমধ্যে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, সম্পদ ও দায় যাচাই, কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদানসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা—১০ হাজার কোটি নগদে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। ফলে নতুন ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে সরকারি মালিকানাধীন হবে।
এছাড়া শেয়ার রূপান্তরের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তর করা হবে। এতে গ্রাহক ও পাওনাদারদের ঋণের একাংশ শেয়ারে রূপান্তর হবে, যা পরে দীর্ঘমেয়াদে নগদায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। এর বিপরীতে ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকায়, যার মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি বা প্রায় ৭৬ শতাংশ খেলাপি।
দেশজুড়ে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ ইউনিয়ন ব্যাংকের—৯৮ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমানতকারীদের সুরক্ষা এই একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য। প্রথম ধাপে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে প্রতিজন গ্রাহককে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হবে। কারও জমা যদি দুই লাখ টাকার কম হয়, তিনি পুরো অর্থ তুলতে পারবেন। বেশি থাকলে প্রথম ধাপে সুরক্ষা তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা এবং বাকি অর্থ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে।

