বাংলাদেশ এখন ব্যাংকিং খাতে এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে—ডিজিটাল ব্যাংকিং যুগে। সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর, ক্যাশলেস এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দেবে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে, যেখানে শাখা বা কাউন্টারের প্রয়োজন পড়বে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে। প্রথমে আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, পরে তা বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। সেই সময়সীমা অনুযায়ী রবিবার ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। সোমবার (৩ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে।
এই ১২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—
ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক (আকিজ গ্রুপ) এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা তৈরি করে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া, এসব ব্যাংক ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন অনুযায়ী পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনা করবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এগুলোর কোনও শারীরিক শাখা বা এটিএম থাকবে না। সব লেনদেন চলবে মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিনই। গ্রাহকরা কিউআর কোড, ভার্চুয়াল কার্ড এবং অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। তবে কোনও প্লাস্টিক কার্ড ইস্যু করা হবে না। প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করা যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এসব ডিজিটাল ব্যাংক বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো এলসি (ঋণপত্র) খোলার অনুমতিও থাকবে না। তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও খুচরা ঋণ প্রদানে অনুমতি থাকবে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে শেয়ারবাজারে আইপিও আনতে হবে। এই আইপিওর পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের কমপক্ষে সমান হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল ব্যাংকিং বাংলাদেশের আর্থিক খাতে এক বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকল্প নয়, বরং এক নতুন, দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সংস্কৃতির সূচনা, যা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও স্মার্ট অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

