বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর বিশ্ববিখ্যাত অর্থনৈতিক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স–এর ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের মূল্যায়নে দুই ধাপ এগিয়ে ‘সি+’ গ্রেড পেয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালে তার পূর্বসূরি আবদুর রউফ তালুকদার পেয়েছিলেন ‘ডি’ গ্রেড। তালিকায় ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানরা পেয়েছেন সর্বোচ্চ ‘এ+’ গ্রেড। শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া অবস্থা ও অতিমুদ্রাস্ফীতি থেকে উত্তরণে নেতৃত্ব দেওয়া গভর্নর নন্দলাল উইরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ-’, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ রেটিং।
পাশাপাশি পাকিস্তানের জামিল আহমদ পেয়েছেন ‘বি-’, আর ভারতের সঞ্জয় মালহোত্রা ও নেপালের বিশ্বনাথ পাওডেলকে সাময়িকভাবে ‘টু আরলি টু সে’ (TETS) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—অর্থাৎ তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য এখনো সময় প্রয়োজন।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স জানায়, জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের ‘এ+’ থেকে ‘এফ’ স্কেল–এ মূল্যায়ন করা হয়। মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রার স্থিতিশীলতা, সুদহার ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহসান এইচ. মনসুর ২০২৪ সালের আগস্টে গভর্নর পদে দায়িত্ব নেন। তখন দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে যান।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স মন্তব্য করেছে, “দায়িত্ব নেওয়ার পর মনসুর দ্রুত বুঝতে পারেন ব্যাংকিং খাতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং নিয়ন্ত্রণহীন মুদ্রাস্ফীতি কমানো জরুরি। টাকাকে স্থিতিশীল করা ছিল তার মূল লক্ষ্য। চলতি বছরে টাকার মান ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪% কমেছে।”
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি রিপো নীতি সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশে নেন। পরবর্তী দুই দফায় বাড়িয়ে অক্টোবর নাগাদ হার ১০ শতাংশে পৌঁছায়। প্রথম দফায় নীতি কঠোর করার সময় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০.৫ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ৮.৫৫ শতাংশে নেমে আসে। গভর্নরের আশা, বছরের শেষে এটি ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
যদিও প্রবৃদ্ধি ধীর। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশ রাখার অনুমান করেছে। এটি ২০১০-২০২০ সময়কালের গড় ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম।
এদিকে আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় গভর্নর তিন বছরের সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)–এর সহায়তায় প্রণীত। পরিকল্পনায় রয়েছে ব্যাংক একীভূতকরণ, খেলাপি ঋণ সমাধান এবং দেউলিয়া ও পুনর্গঠন আইন সংস্কার।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স মন্তব্য করেছে, “যদি এই সংস্কারগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ আবারও টেকসই প্রবৃদ্ধির পুরোনো ধারায় ফিরে আসতে পারে।”

