দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা পৌঁছেছে। এই ঋণ দ্রুত আদায়ে কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তফসিলি ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানরা। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বড় খেলাপিদের বিদেশে যাত্রা করতে না দেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন। পাশাপাশি বকেয়া আদায়ে আদালতে মামলা করার সময় নিয়মিত এককালীন ডাউন পেমেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
বেসামাল খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. কবির আহম্মদ। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর প্রেসিডেন্ট এবং সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।
মাসরুর আরেফিন বলেন, “সরকারি পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের জুনে খেলাপির হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এক বছরের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা নতুনভাবে খেলাপি হয়েছে। এত বড় ঋণ কীভাবে আদায় করা হবে, তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”
তিনি জানান, বৈঠকে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করা হলে নিয়মিত ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাড়িয়ে অর্ধেকের কাছাকাছি করার প্রস্তাব হয়েছে। এছাড়া রিট শুনানিতে ব্যাংকারদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার বিষয়টি তোলা হয়েছে। আদালতে খেলাপিদের স্বার্থের পাশাপাশি আমানতকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও শোনা গেছে।
মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, “ব্যাংকগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান কিছু ফলাফল চাইছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও এই অগ্রগতি দেখতে চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) ব্যাংকের আমানত ফেরত দিচ্ছে না। তাই এনবিএফআইগুলো যেন অর্থ ফেরত দেয়, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, “পতিত সরকারের সময় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া নীতি সহায়তা কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন ২৫ লাখ টাকার ডাউন পেমেন্ট দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। গ্রাহকভেদে ১-২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেক খেলাপি ঋণ নীতিমালার বাইরে নতুন ঋণ চাচ্ছে। শুরুতে নীতি সহায়তা কার্যক্রম ভালো শুরু হলেও ঋণ গ্রহীতাদের সাড়া না পাওয়ায় তা ব্যর্থ হয়ে গেছে।”
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় ব্যবসায়িক গতি বাড়াতে গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় করপোরেট ঋণখেলাপিসহ প্রায় ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ থেকে ১৫ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। সুবিধার আওতায় ডাউন পেমেন্ট মাত্র ১ শতাংশ থেকে শুরু হবে এবং কিস্তি পরিশোধ শুরু করার আগে তিন বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। তবে শর্তগুলো প্রতিষ্ঠানভেদে আলাদা হবে। বিশেষ সুবিধার আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আবদুল মোনেম গ্রুপ, ড্যান্ডি ডাইং, তানাকা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত, আনোয়ার গ্রুপ, শাদাব ফ্যাশন ও অ্যাপেক্স উইভিং। উল্লেখ্য, ১ হাজার ২৫০টি প্রতিষ্ঠান এই বিশেষ নীতি সহায়তার জন্য আবেদন করেছিল।

