বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মন্দমানের খেলাপি ঋণ অবলোপনের নোটিশ সময় কমিয়ে দিয়েছে। আগে গ্রাহককে ৩০ দিন আগে নোটিশ দেওয়া হতো। নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবার ন্যূনতম ১০ কর্মদিবস আগে নোটিশ দেওয়ার সুযোগ হবে। প্রজ্ঞাপনটি গতকাল বুধবার জারি করা হয়েছে।
ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে খেলাপি বা মন্দ ঋণকে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট থেকে বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো ব্যালান্স শিটে ঋণের পরিমাণ কমানো। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব নিষ্পত্তিতে সময় লাগার কারণে নোটিশ সময় কমানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নগদ প্রণোদনা দিতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের এ ধরনের নীতিমালা না থাকলে, তা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রণয়ন করতে হবে।
এছাড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কেবল আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ মন্দ ও ক্ষতিজনক ঋণই অবলোপন করা যাবে। এই ক্ষেত্রে পুরোনো শ্রেণীকৃত ঋণগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জানা গেছে, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পুঞ্জীভূত অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ৮১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থিতি ৬৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ২০০৩ সালে অবলোপন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টি ব্যাংক খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। তবে ঋণ অবলোপনের আগে অবশ্যই আদালতে মামলা করতে হয় এবং ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা বাধ্যতামূলক। আগের নিয়মে টানা দুই বছর মন্দ ঋণ থাকলে অবলোপন করা যেত। তবে গত ১৯ অক্টোবর জারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যেকোনো সময় মন্দ ঋণ অবলোপন করা সম্ভব হয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “অনেকদিন ধরেই ব্যাংকাররা ঋণ অবলোপনের দাবি তুলছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অক্টোবর মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে মন্দ ঋণ দ্রুত অবলোপন করা যাবে এবং ব্যালান্স শিট পরিষ্কার হবে। তবে ১০০ শতাংশ সঞ্চিতি রক্ষায় ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কমবে। ব্যালান্স শিট স্বচ্ছ হবে।”
১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) আবেদনের পর মন্দ ও ক্ষতিজনক ঋণ অবলোপনের জন্য গ্রাহককে ৩০ দিন আগে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের নগদ প্রণোদনা প্রদানের নিয়মও জানানো হয়েছিল। সেই নীতিমালা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিতে হয়। এর মধ্যে ব্যাংকের এমডি পান ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে ৯০ শতাংশ পান।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “অবলোপনকে ব্যাংকগুলো ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ব্যালান্স শিট পরিষ্কার দেখাতে এটি কার্যকর। তবে গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। তাই অবলোপনের পর আদায় প্রক্রিয়াও সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংকের রেটিংয়ের সময় প্রভিশন ঘাটতি ও ঋণ পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”

