রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারখানা, জমি ও করপোরেট সদর দপ্তর ‘বেল টাওয়ার’ নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত। নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হলো এমন সময়ে, যখন সরকার আন্তর্জাতিক লিজিং ব্যবস্থায় বেক্সিমকোর বিপর্যস্ত টেক্সটাইল ইউনিটগুলো পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জনতা ব্যাংক জানায়, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সুদসহ বকেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এসব সম্পদ নিলামে তোলা হচ্ছে। আগ্রহী ক্রেতাদের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। একই বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসেস ফ্যাশনস লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তোলার ঘোষণাও দিয়েছে ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠানটির ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বেক্সিমকোর যে সম্পদ নিলামে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে— গাজীপুরের ৩,৫২৭ ডেসিমেল জমি ও কারখানা, আশুলিয়ার ১৪৬.৬৫ ডেসিমেল জমি এবং নারায়ণগঞ্জের ৪৪০ ডেসিমেল জমি। এছাড়া ধানমন্ডির ১৫ তলা করপোরেট অফিস ‘বেল টাওয়ার’ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে।
এর আগে ২১ নভেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান— ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেডের ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ (মূল্যায়ন ১,৭৫৪.৭ কোটি টাকা), আরবান ফ্যাশনস (মূল্যায়ন ৭২৪.২৬ কোটি) এবং অ্যাপোলো অ্যাপারেলস (মূল্যায়ন ৮১৬.৪ কোটি)— এর সম্পদ নিলামে তোলার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেয় ব্যাংকটি।
নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে এমন সময়, যখন দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা— জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ ‘রিভাইভাল’ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সংগঠন ‘ইকোমিলি’— বেক্সিমকোর কারখানাগুলো পুনরায় চালু করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
সংস্থাদুটি এক বিবৃতিতে জানায়, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংকটের কারণে বেক্সিমকোর কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। লিজ চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছিল। এ সময়ে জনতা ব্যাংক হঠাৎ করেই জমি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি নিলামে তোলায় তারা “স্তম্ভিত” হয়েছে বলে মন্তব্য করে।
রিভাইভাল ও ইকোমিলির ভাষ্য, বেক্সিমকোর কারখানাকে ঘিরে স্থানীয় জনগণ, শ্রমিক পরিবার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিদ্যালয় ও দোকানদার— সবার সঙ্গে তাদের ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই দ্রুত কারখানা চালু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় শিল্পসম্পদ নিলামে তোলা একটি সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত। এটি যথাযথ সতর্কতা, স্বচ্ছতা এবং শ্রমিক, বিশেষজ্ঞ ও শেয়ারহোল্ডারদের মতামত নিয়ে গ্রহণ করা উচিত।
তারা জনতা ব্যাংককে নিলাম সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায় এবং সতর্ক করে যে এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতৃত্বে বহুল প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাহত করতে পারে। তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে যে দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতে যে নতুন করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফোনকল ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায়ও তিনি কোনো জবাব দেননি। বেক্সিমকোর এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

