এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর সঙ্গে নারীর অংশগ্রহণ ও রেমিট্যান্স লেনদেন দ্রুত বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং এখন শুধু লেনদেনের মাধ্যম নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রবাসী আয় বিতরণের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে থাকা মোট ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের ৪৯.৪ শতাংশই নারীদের নামে। অর্থাৎ গ্রামীণ ও অনুন্নত অঞ্চলের নারীরা সরাসরি ব্যাংক সেবার আওতায় আসছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বড় অগ্রগতি। দেশে বর্তমানে ৯.৪৬ শতাংশ এজেন্ট নারী মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। নারী মালিকাধীন আউটলেটগুলো স্থানীয়ভাবে আত্মবিশ্বাস ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করছে। ব্যাংকের শাখা ছাড়া গ্রাহককে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ২০১৩ সালে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে ‘নীরব বিপ্লব’ হয়ে উঠেছে।
এক যুগে এজেন্ট ব্যাংকিং শুধু গ্রাহক সংখ্যা, আমানত ও ঋণ বিতরণে নয়, প্রবাসী আয় সংগ্রহেও রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে মোট প্রবাসী আয় ছিল ৯২ হাজার ৩৯৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৫১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা (৮.৮ শতাংশ) এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গ্রামে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া রেমিট্যান্স শহরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। অর্থাৎ প্রবাসী পরিবারের বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলে, এবং তারা স্থানীয় এজেন্ট পয়েন্ট থেকেই সহজে রেমিট্যান্স গ্রহণ করছে।
দেশের ব্যাংক খাতে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট আমানত হয়েছে ৪৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, এবং ৩০টি ব্যাংক মিলিয়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৩১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক আমানতে এগিয়ে রয়েছে, আর ঋণ বিতরণে সবচেয়ে এগিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক। মোট সংগৃহীত আমানতের মধ্যে একাই ইসলামী ব্যাংক সংগ্রহ করেছে ২১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ বিতরণে ব্র্যাক ব্যাংক বিতরণ করেছে ২২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩০টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের মোট এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দুই কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৩। দেশে মোট এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট রয়েছে ২০ হাজার ৪৮৮টি। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৫ হাজার ৬২০, ব্যাংক এশিয়ার ৫ হাজার ৩৫, এবং ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ৭৯২টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের রেকর্ড ভঙ্গ শুধু পরিসংখ্যান নয়। এটি দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিপ্লব বয়ে এনেছে। এখন এটি প্রবাসী আয় বিতরণের অন্যতম চ্যানেল। প্রত্যন্ত এলাকার পরিবারগুলোও এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে যুক্ত হচ্ছে।”

