বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের দুরবস্থা নিয়ে নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, তাদের অন্তত অর্ধেকই কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত নয়। ফলে কার কাছে ঋণ গেছে, সেই তথ্য নিশ্চিত নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার হোটেল আমারিতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) আয়োজিত ‘ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতা ও রেজল্যুশন উদ্যোগ’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন। তিনি জানান, পাঁচ ব্যাংক ইতোমধ্যে একীভূত হয়েছে এবং পুরো ব্যাংক খাতে আরও গভীর সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য একটি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে।
পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কাটিয়ে ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে। আশা করা যায়, আগামীতে নির্বাচিত সরকার অর্থনৈতিক নীতি ঠিকভাবে পরিচালনা করবে।
লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক তৈরি পোশাক কারখানার মালিক পালিয়ে যান। তখন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বারবার ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম কোম্পানিগুলোর ঋণ সম্পর্কে।
ব্যাংকগুলো জানায়, ঋণের পরিমাণ ২২ হাজার থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। অর্থাৎ চার হাজার কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। অর্ধেক প্রতিষ্ঠান কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিতই নয়, অর্থাৎ আমরা জানিই না কোন সত্তাকে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংকিং রেজল্যুশন অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এখন প্রয়োজন কার্যকর প্রক্রিয়া, নির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় বিনিয়োগ।
মুক্ত আলোচনায় প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আখতার হোসেন জানান, উচ্চ খেলাপি ঋণের চাপ মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। এতে মুদ্রানীতি প্রণয়নে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। ভবিষ্যতে আরও ব্যাংক একীভূতের আওতায় আসবে বলে তিনি জানান।
এবিবির চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, অতীতে কিছু ব্যাংক খুব খারাপ অবস্থায় ছিল, এখন সেগুলোই দেশের সেরা ব্যাংকগুলোর তালিকায় এসেছে। সিটি ব্যাংক তার একটি উদাহরণ।

