গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৬ হাজার ৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ৪৮ লাখ ৫ হাজার, যেখানে জমা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যা চার লাখের বেশি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য চলতি বছর থেকে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল ব্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিংকে আরও জনপ্রিয় করতে এবং টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে চলতি বছরের মার্চে সব ব্যাংকের শাখার কাছে নির্দেশ দিয়েছে, নিকটবর্তী অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিতে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা ও লেনদেন সেবা। শাখা নির্বাচনে দ্বৈততা এড়াতে ব্যাংকগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক শিক্ষা এবং ব্যাংককর্মীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন হিসেবে পাঠানো বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক শিক্ষা সম্প্রসারণ ছাড়া ‘ক্যাশলেস’ লেনদেন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে একটি করে স্কুল নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ উদ্যোগেও স্কুলগুলোর বেতন-ভাতাসহ সব লেনদেন ডিজিটাল করার কাজ করছে। প্রথম ধাপে মতিঝিলসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা অফিসের স্কুলের লেনদেন ডিজিটাল হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে শাখার আশপাশের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনও ডিজিটাল করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে মোট ২৬ হাজার ৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। মোট হিসাবের ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ গ্রামে, ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শহরে। রাজধানীসহ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় স্থাপিত শাখার আওতায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শহর শাখার সেবা হিসেবে গণ্য করা হয়। হিসাবের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের অনুপাত প্রায় সমান; ছাত্র ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ, ছাত্রী ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে দুটি ছাড়া সব ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে।
শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮ বছর পার হলে তাদের হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮৭ হাজার অ্যাকাউন্ট সাধারণ হিসাব হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিটি শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে চলতি বছরের মধ্যে অন্তত ৩০০টি নতুন হিসাব খোলার। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি শাখা ১০০টি হিসাব খোলার লক্ষ্য পূরণ করেছে। কার্যক্রম জোরদারের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩টি স্কুল ব্যাংকিং সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
২০১০ সালের আগে শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সীরাই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন। টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ চালু হয়। শিক্ষার্থী আইডি কার্ড দেখিয়ে মাত্র একশ টাকা জমা দিয়ে যে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। দেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাই তাদের জন্য অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য শিশুদের মধ্যে সঞ্চয়ভিত্তিক অভ্যাস ও আর্থিক ধারণা গড়ে তোলা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিক্ষার্থীদের জমার ওপর সর্বোচ্চ সুদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আর্থিক শিক্ষার ঘাটতির কারণে দেশের অনেক মানুষ আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবায় আসে না। এটি ক্যাশলেস লেনদেন সম্প্রসারণে বড় বাধা। দেশে ১১ হাজার ৪০১টি ব্যাংক শাখা রয়েছে। প্রতিটি শাখা অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাসহ সব লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালু করা হবে।

