দেশের তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে খসড়াটি নিয়ে নানা অসংগতির অভিযোগ উঠেছে।
খসড়াটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। আলোচনার সময় বিভিন্ন পক্ষ খসড়ায় থাকা অসংগতি তুলে ধরেন।
এ অবস্থায় খসড়াটি পর্যালোচনার জন্য ১০ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুবকে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন মহল। তবে আগের কোনো সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৭ মে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ক্ষুদ্রঋণ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক স্থাপনের কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরই দ্রুততার সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংকের অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমআরএর সহায়তায় খসড়াটি প্রস্তুত করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করেনি।
গত ২৬ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নিজেদের ওয়েবসাইটে খসড়াটি প্রকাশ করে। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়। পরে খসড়াটি চূড়ান্ত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, এমআরএ, পিকেএসএফসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, খসড়াটি ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খসড়ায় এমআরএর অধীনে একটি আলাদা বিভাগ বা দপ্তর গঠনের কথা বলা হয়েছে। ওই দপ্তরের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। বিভাগটি একজন প্রধান নির্বাহীর মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং পরে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
তবে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ নামের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বৈঠককে জানান, ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। একই সঙ্গে এসব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে এমআরএর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে মূলত এনজিওগুলো। এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৮৩। পিকেএসএফ ও বিশেষায়িত গ্রামীণ ব্যাংকও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে প্রস্তাবিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে আলাদা হবে, সে বিষয়ে খসড়ায় স্পষ্ট ধারণা নেই।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের আওতায় গঠিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক সরকারি হবে নাকি বেসরকারি হবে, সেটিও উল্লেখ করা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তাড়াহুড়া করে খসড়া প্রস্তুত করায় এতে বহু অসংগতি রয়ে গেছে। তাই বিষয়টি বাস্তবায়নের আগে গভীরভাবে বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
এই প্রেক্ষাপটে খসড়াটি পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গঠিত ১০ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এমআরএ, পিকেএসএফ, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, আইডিএফ ও পিএমকের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

