বাংলাদেশে দুই দশক আগে কফি বাজারে একচেটিয়া ছিল ইনস্ট্যান্ট কফি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কফি বিন আমদানির ধারা শুরু হলেও- কফি প্রেমীদের মধ্যে ইনস্ট্যান্ট কফির চাহিদা কমেনি। বর্তমানে দেশের কফি বাজারের প্রায় ৮৩ শতাংশই ইনস্ট্যান্ট কফির দখলে রয়েছে।
কফি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকের বাসা বা অফিসে কফি বিন ভেঙে কফি তৈরি করার সময় নেই। তাই দ্রুত গরম পানিতে ইনস্ট্যান্ট কফি দিয়ে কফির স্বাদ নেওয়াই তাদের জন্য প্রাধান্য পাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫–০৬ অর্থবছরে মোট কফি আমদানের ৯৮ শতাংশ ছিল ইনস্ট্যান্ট কফি, আর কফি বিনের আমদানির অংশ মাত্র ২ শতাংশ। দুই দশক পর, সর্বশেষ অর্থবছরে মোট আমদানের ৮৩ শতাংশই ইনস্ট্যান্ট কফি, আর ১৭ শতাংশ কফি বিন।
বাজারের প্রধান খেলোয়াড়-
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কফি বাজারজাতকরণ শুরু হয় প্রায় ২৭ বছর আগে নেস্লের মাধ্যমে। পরবর্তীতে আরো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রবেশ করে। দুই দশক ধরে নেস্লের দখল ছিল সবচেয়ে বড়, তবে তরুণদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানও এই বাজারে প্রবেশ করেছে, ফলে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে কফি উৎপাদন সীমিত হওয়ায়, বাজার অংশীদারি অনুমান করতে আমদানির তথ্য ব্যবহার করা হয়। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ অর্থবছরেও নেস্লের শীর্ষ অবস্থান বজায় রয়েছে।
তবে বাজারে অংশীদারি কমেছে। ২৪–২৫ অর্থবছরে নেস্লে বাংলাদেশ পিএলসি ৩ লাখ ৭২ হাজার কেজি কফি আমদানি করেছে, যা মোট আমদানের ২৭.৪৭ শতাংশ। ২৩–২৪ অর্থবছরে নেস্লের অংশীদারি ছিল ৪৭ শতাংশ।
নতুন ও দ্রুতবর্ধমান ব্র্যান্ড-
কফি বাজারে আবুল খায়ের গ্রুপ তুলনামূলকভাবে নতুন। মাত্র পাঁচ বছর আগে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড বাজারে প্রবেশ করে। তবে তারা সবচেয়ে দ্রুতবর্ধমান। ২৩–২৪ অর্থবছরে তাদের বাজার অংশীদারি ১১ শতাংশ, যা পরবর্তী অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.০৯ শতাংশ। এই ব্র্যান্ডটি ‘আমা’ নামে ইনস্ট্যান্ট কফি বাজারজাত করছে।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নর্থএন্ড প্রাইভেট লিমিটেড। তারা মূলত কফি বিন আমদানি করে। তাদের বাজার অংশীদারি ২৩–২৪ অর্থবছরে ৭ শতাংশ থেকে ২৪–২৫ অর্থবছরে প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রাণ–আরএফএল। ২০১৭ সাল থেকে তারা কফি বড় আকারে বাজারজাত করছে। সর্বশেষ অর্থবছরে তাদের অংশীদারি ছিল ৬.৫ শতাংশ, যা সামান্য কমেছে।
শহরে কফি জনপ্রিয় করতে নাভানা ফুডসের গ্লোরিয়া জিনসের অবদান আছে। তারা কফি বিনও বিক্রি করছে। সর্বশেষ অর্থবছরে তারা ৩,৩৩৯ কেজি রোস্টেড কফি বিন আমদানি করেছে।
৪৩ দেশের কফি বাংলাদেশে-
বাংলাদেশে কফির বাজার আকারে ছোট হলেও- দেশের বাজারে কফি আসে ৪৩ দেশ থেকে। বিমান, জাহাজ ও স্থলবন্দর ব্যবহার করে কফি আমদানি করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কফি আসে ভারত, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কলম্বিয়া থেকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) অনুযায়ী, বিশ্বে কফি উৎপাদনে ভারতের অবস্থান নবম। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট কফির ৬৭ শতাংশই ভারত থেকে আসে। খরচ কম হওয়ায় ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ বেশি।
দ্বিতীয় প্রধান উৎস দেশ ব্রাজিল, যা থেকে আসে মোট কফির ৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া (৫ শতাংশ) এবং চতুর্থ অবস্থানে ইন্দোনেশিয়া (৫ শতাংশ)। কলম্বিয়া থেকে আসে ৩ শতাংশ কফি। এছাড়াও অনেক দেশ থেকে কফি আমদানি হয়ে থাকে।

