বাংলাদেশ ও সৌদি আরব যৌথভাবে ঢাকায় উদ্বোধন করেছে সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের জন্য প্রথম স্থায়ী ও কাঠামোবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম।
গতকাল গুলশানে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, “এই উদ্যোগ বহুদিনের অপেক্ষার ফল। শক্তিশালী কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, গত ৫০ বছরে কোনো প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম ছিল না।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবের মূল অংশীদারদের সহযোগিতায় সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাস্তবায়িত হয়েছে।”
চেম্বারটি পোশাক, আইটি, ডিজিটাল ফাইন্যান্স, কৃষিপণ্য এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে রপ্তানি হয়েছে ৩১০ মিলিয়ন ডলার, এবং মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতি সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশী শ্রমবাজার হিসেবেই রয়ে গেছে, যেখানে তিন মিলিয়নের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত।
চেম্বার সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পেট্রোকেমিক্যাল, তেল পরিশোধন, সবুজ প্রযুক্তি এবং বন্দরের ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ইতিমধ্যেই সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।”
আজ থেকে শেরাটন ঢাকা হোটেলে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী সৌদি–বাংলাদেশ বিজনেস সামিট, যেখানে ২০ সদস্যের সৌদি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। সামিটের প্রধান আকর্ষণ হবে সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিজনেস সামিট, যা ৭ অক্টোবর উদ্বোধন হবে। এতে দুই দেশের শীর্ষ নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবেন। উজমা চৌধুরী, সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক ও প্রাণ-আরএফএল এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত রপ্তানি মডেলকে আইটি সেবা এবং দক্ষ জনশক্তির সঙ্গে মিলিয়ে আরও সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব তৈরি করা দরকার, বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা খাতে।”
তিনি যোগ করেন, প্রাণ-আরএফএল এর পণ্য সৌদি বাজারে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু এখন শুধুমাত্র পণ্য রপ্তানি নয়, আরও গভীর এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় এসেছে।” উজমা চৌধুরী উল্লেখ করেন, রপ্তানি নিবন্ধন ও ভিসা সমস্যা এখনও বড় প্রতিবন্ধকতা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো নীতি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারবে। “আমরা আমাদের দক্ষ জনশক্তি — নার্স, প্রযুক্তিবিদ ও আইটি প্রফেশনালদের — সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করে সৌদি আরবকে অগ্রাধিকারযুক্ত গন্তব্য বানাতে চাই।”
আহমদ ইউসুফ ওয়ালিদ, সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতি, বলেন, “এই চেম্বারের ধারণা দুই বছর আগে সৌদি ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় এসেছে। এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম অনেক আগে তৈরি হওয়া উচিত ছিল। আমাদের লক্ষ্য বাণিজ্য সহজ করা, ব্যবসা সংযোগ স্থাপন এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা।”
মেসবাউল আসিফ সিদ্দিকি, সিটি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সৌদি আরব–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক বলেন, “সৌদি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমাদের আর্থিক অবকাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। সৌদি আরবের ১.২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বিশাল সম্ভাবনা রাখে, তবে নীতি স্থিরতা এবং সুবিধাজনক প্রক্রিয়া দরকার।” তিনি উল্লেখ করেন, তেল পরিশোধন, স্বাস্থ্যসেবা, আইটি এবং অবকাঠামো বিশেষ করে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এসব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, “যদি আমাদের ব্যাংকগুলোর মূলধন শক্তিশালী হয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারব।”

