বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতিতে চলা ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (P&G) এবার বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে প্রবেশের পর কোম্পানিটি দীর্ঘ তিন দশক ধরে দেশের বাজারে সক্রিয় ছিল। প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে কারখানা স্থাপন করলেও, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পুনর্গঠন ও খরচ কমানোর নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর প্রধান পণ্য ছিল জিলেট রেজর ও গ্রুমিং আইটেম, প্যাম্পারস বেবি ডায়াপার, হুইসপার স্যানিটারি ন্যাপকিন, হেড অ্যান্ড শোল্ডার ও প্যান্টিন শ্যাম্পু, এরিয়াল ও টাইড ডিটারজেন্ট, মি. ক্লিন ক্লিনার এবং ভিক্স ব্র্যান্ডের পণ্য।
এরই মধ্যে কোম্পানিটি জিলেট ইন্ডিয়ার সঙ্গে পরিবেশক চুক্তি বাতিল করেছে, পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশক প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ গ্রুপের অংশ ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডস লিমিটেডের (আইবিএল) সঙ্গে চুক্তিও আর নবায়ন করবে না। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান চাইলে নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে বিক্রি করতে পারবে, তবে সরাসরি প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর সহযোগিতা আর থাকবে না।
পরিবেশক চুক্তি বাতিলের প্রভাব ইতোমধ্যেই বাজারে দেখা যাচ্ছে। মূল শহরের সুপারশপ ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর পণ্যের মজুদ দ্রুত শেষ হচ্ছে। রেজর, স্যানিটারি প্যাডসহ কিছু জনপ্রিয় পণ্য বাজার থেকে অদৃশ্য হতে শুরু করেছে।
২০২১ সালে প্রাণ গ্রুপের অলিপুর শিল্প পার্কে যৌথভাবে কারখানা স্থাপন করে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল বাংলাদেশ। জেলেট রেজরের উৎপাদন শুরু হলেও, কোম্পানিটি জানিয়েছে যে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। প্রাণ গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারখানা ও যন্ত্রপাতি অক্ষত অবস্থায় আছে, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর অনুমতি পেলেই উৎপাদন পুনরায় শুরু করা যাবে।
বৈশ্বিক ব্যবসায়িক কারণ
প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে কোম্পানির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সেজন্য আগামী দুই বছরের মধ্যে সাত হাজার কর্মী ছাঁটাই এবং ব্যয় সংক্ষেপের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়াও এ নীতির অংশ।
কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা আন্দ্রে শুলটেন বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছেন, তারা সরবরাহ শৃঙ্খলে বিনিয়োগ পুনর্বিন্যাস, উৎপাদন স্থানান্তর এবং খরচ হ্রাসের মাধ্যমে ব্যবসাকে আরও দক্ষ ও স্থিতিশীল করতে চাইছে।
প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল সম্প্রতি পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া থেকে ব্যবসা সরিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাবান উৎপাদন কারখানা বিক্রি করা হয়েছে এবং পণ্য সরবরাহ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চালু রাখা হবে। কর্মীদের জন্য পুনর্বিন্যাস ও ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের প্রভাব
বাংলাদেশে এফডিআই (FDI) আকর্ষণে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল-এর মতো বহুজাতিক কোম্পানির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালে দেশে এফডিআই স্টক ছিল ১৮.৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা পরের দুই বছরে কমে ১৭.৮৩ বিলিয়নে নেমেছিল। ২০২৪ সালে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৮.২৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি বড় বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য নেতিবাচক বার্তা প্রেরণ করতে পারে। কাঙ্ক্ষিত এফডিআই বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।

