ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর (ট্রান্সশিপমেন্ট) সুবিধা বন্ধের পরও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা বিকল্প ব্যবস্থায় ইউরোপে পণ্য পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিল থেকে ভারত এই সুবিধা বন্ধ করলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট জাহাজে পণ্য পাঠানো হচ্ছে কলম্বোতে। সেখান থেকে বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) সরাসরি ইউরোপে যাচ্ছে। জরুরি চালানের ক্ষেত্রে কলম্বো থেকে দুবাই হয়ে আকাশপথে পণ্য পাঠানো হয়।
সরকারের উদ্যোগে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন বিস্ফোরক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (ইডিএস) স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারটি ইডিএস মেশিন মেরামত করে সচল করা হয়েছে। এছাড়া দুই বিমানবন্দরেই রপ্তানি পণ্যের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় সেন্ট কমানো হয়েছে।
পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, “সিলেটে ইডিএস চালু হওয়ায় ঢাকার ওপর চাপ কমেছে। ইনডিটেক্সের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এখন সিলেট বা ঢাকা থেকে নিজস্ব চার্টার্ড বিমানে পণ্য পাঠাচ্ছে।”
বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, আকাশপথে পণ্যের চাপ কমায় কার্গো বিমানে জায়গার সংকট নেই। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক এখন কলম্বো হয়ে জাহাজে যাচ্ছে। দ্রুত পৌঁছানোর জন্য দুবাই হয়ে আকাশপথ ব্যবহার করা হচ্ছে।
আগে ঢাকার বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং সীমাবদ্ধ এবং কার্গো বিমানে স্থান স্বল্পতার কারণে রপ্তানিকারকরা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য পাঠাতেন।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, বছরের প্রথম তিন মাসে ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রায় ৩৫ হাজার টন পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারত হয়ে রপ্তানি হতো।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের পর ঢাকা ও সিলেট উভয় বিমানবন্দরেই স্ক্রিনিং সুবিধা উন্নত করা হয়েছে। সিলেট থেকে ইউরোপে কার্গো খরচ কেজিপ্রতি প্রায় ২.৮০ ডলার, ব্যস্ত মৌসুমে ৪ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে পাঠাতে খরচ পড়ত ২.১০ থেকে ২.২০ ডলার, সঙ্গে বেনাপোল পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া বাবদ আরো ১৫-২০ সেন্ট যুক্ত হতো।
বেবিচকের সদস্য এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানান, ইউরোপগামী পণ্যের স্ক্রিনিং চার্জ ৮ সেন্ট থেকে কমিয়ে ৬ সেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দর থেকে দৈনিক গড়ে ৪৫০ টন কার্গো পণ্য পাঠানো হয়, পিক পিরিয়ডে প্রায় ১,২০০ টন।
সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ জানান, গত আগস্টে এই বিমানবন্দর থেকে তিনটি কার্গো চালান পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১০০ টন এবং চাহিদা বাড়লে কার্যক্রম বাড়াতে তারা প্রস্তুত।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ বলেন, দেশের রপ্তানি সহজ করতে কার্গো ফ্লাইটগুলোকে যেকোনো বিধিনিষেধের বাইরে রাখা হয়েছে। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ১০০ টনের বর্তমান ধারণক্ষমতা বাড়াতে প্রস্তুত।
বেবিচকের শীর্ষ কর্মকর্তারা এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার তৃতীয় টার্মিনাল চালুর কথা বললেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, জাপানি কনসোর্টিয়াম যদি নতুন টার্মিনালের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তবে সরকার অন্য আন্তর্জাতিক অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে প্রস্তুত।

