বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের মানচিত্রে চলছে এক বড় প্রজন্মগত পরিবর্তন। নেতৃত্বে আছে জেন–জি (জন্ম ১৯৯৭–২০১২) ও মিলেনিয়াল (জন্ম ১৯৮১–১৯৯৬) প্রজন্মের বিনিয়োগকারীরা। বিশেষত্ব হলো, তাঁরা অল্প বয়সেই বিনিয়োগে নামছেন, নিয়মিত পোর্টফোলিও ঘেঁটে দেখছেন এবং আগের যেকোনো প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছেন বিশ্ববাজারে।
সবচেয়ে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। তরুণ, শিক্ষিত ও সম্পদশালী জনগোষ্ঠীর দ্রুত উত্থানে এই অঞ্চলের আর্থিক চিত্র বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মূলে আছে প্রজন্মভেদে বিনিয়োগের মানসিক পার্থক্য। বেবি বুমার প্রজন্ম (জন্ম ১৯৪৬–১৯৬৪) বিনিয়োগ করত ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বা মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি এড়াতে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগ তাৎক্ষণিক, গতিশীল ও জীবনমুখী। তাঁরা বিনিয়োগ করছেন নতুন আয়ের উৎস গড়ে তোলার জন্য—ভ্রমণ, পরিবারের সহায়তা কিংবা নিজের জীবনযাত্রা উন্নত করতে। তাঁদের আত্মবিশ্বাসই এই মানসিকতার মূল চালিকাশক্তি।
আত্মবিশ্বাসের তিন স্তম্ভ: এই আত্মবিশ্বাস নিছক আশাবাদ নয়; বরং অর্থনীতি, সমাজ ও প্রযুক্তির প্রভাবেই গড়ে উঠেছে এক আত্মনির্ভর মনোভাব। তিনটি উপাদান এখানে মুখ্য ভূমিকা রাখছে—
আশাবাদ ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহস: তরুণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। সুযোগ দেখলেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে আগের প্রজন্ম ছিল অনেক বেশি সতর্ক।
প্রাথমিক মূলধনে প্রবেশাধিকার: তারা অল্প বয়সেই মূলধন পাচ্ছে, ফলে তরুণ বয়সেই উদ্ভাবনী ও সাহসী বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করছে।
গতিশীল আর্থিক লক্ষ্য: অবসরের জন্য সঞ্চয় নয়, বরং এখনই উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করছে। এই মানসিক শক্তিকে আরও গতিশীল করছে প্রযুক্তি।
একসময় বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে বড় মূলধন, উপদেষ্টা ও কাগজপত্র দরকার হতো। এখন স্মার্টফোনের কয়েকটি ট্যাপেই সব সম্ভব। এই পরিবর্তন বিনিয়োগকারী ও বাজারের সম্পর্কের ভারসাম্য বদলে দিয়েছে। আজকের তরুণ বিনিয়োগকারী যেকোনো দেশ, যেকোনো সময়, যেকোনো বাজারে অংশ নিতে পারছেন। সময় ও স্থানের বাধা আর নেই।
তরুণেরা এখন কেবল প্রচলিত বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করছেন না; তাঁরা এআইভিত্তিক ডেটা, অনলাইন বিনিয়োগ কমিউনিটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করছেন। তবে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়লেও মানবিক পরামর্শের মূল্য তাঁরা অস্বীকার করছেন না। সংকটময় সময়ে বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলার প্রবণতা এশিয়া অঞ্চলে বিশেষভাবে দৃশ্যমান। তাই জনপ্রিয় হচ্ছে ‘হাইব্রিড মডেল’—যেখানে মানবিক অন্তর্দৃষ্টি মিশেছে ডিজিটাল সুবিধার সঙ্গে। এই মডেল বিনিয়োগকারীদের দিচ্ছে দুই জগতের সেরা অভিজ্ঞতা—মানবিক পরামর্শের গভীরতা এবং প্রযুক্তির স্বাচ্ছন্দ্য।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলট্রাটা জানিয়েছে, আগামী এক দশকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তর হবে প্রায় ৩১ লাখ কোটি ডলারের সম্পদ। এটি শুধু সম্পদ স্থানান্তর নয়; বরং প্রজন্মগুলোর মধ্যে শেখার এক বিরল সুযোগ। বয়স্ক প্রজন্ম তরুণদের কাছ থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা ও বিনিয়োগে নতুন ভাবনা শিখতে পারে। অন্যদিকে তরুণেরা শিখতে পারে প্রবীণদের কাছ থেকে মূলধন সংরক্ষণ ও ঝুঁকি বণ্টনের কৌশল। এই পারস্পরিক শিক্ষা ভবিষ্যতের টেকসই বিনিয়োগ কাঠামোর ভিত্তি হতে পারে।

