রপ্তানিতে সাব–কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে উৎপাদিত তৈরি পোশাক ও বস্ত্রজাত পণ্যের বিপরীতে এখন থেকে নগদ সহায়তা পাবে সংশ্লিষ্ট কারখানা। তবে উৎপাদনে জড়িত নয় এমন ট্রেডার বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই সুবিধা পাবে না। কেবল যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কারখানা আছে, তারা এই সহায়তার আওতায় থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়। সেখানে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাব–কন্ট্রাক্টিংয়ের ক্ষেত্রে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে সাব–কন্ট্রাক্টিং গাইডলাইন–২০১৯’ এবং ‘সরাসরি রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান (ওয়্যারহাউস পদ্ধতির আওতায় সাময়িক আমদানি, ওয়্যারহাউস পরিচালনা ও কার্যপদ্ধতি) বিধিমালা, ২০২৪’ মানতে হবে। রপ্তানিকারকেরা জানান, নতুন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফাস্ট সেলস ফ্রেমওয়ার্ক’–এর আওতায় রপ্তানি সহজ হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম শুল্কে পোশাক পাঠানো সম্ভব হবে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ পেলে অনেক কারখানা অন্য কারখানাকে ঠিকায় কাজ দিয়ে থাকে। এটি নিয়মিত চর্চা। আগে এসব ক্ষেত্রে প্রণোদনা পাওয়া যেত না। এখন থেকে মিলবে। রপ্তানির ২–৩ শতাংশ এ ধরনের চুক্তির মাধ্যমে হয়। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করলে শুল্কছাড়ও মিলবে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর সাব–কন্ট্রাক্ট কারখানার প্রণোদনা নিয়ে আলোচনা গতি পায়। প্রক্রিয়াটি শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। সাব–কন্ট্রাক্টিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত ও রপ্তানি করা তৈরি পোশাকে নগদ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে ট্যারিফ কমিশনকে সমীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত মে মাসে ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। সেখানে বলা হয়, সাব–কন্ট্রাক্টিং একই মালিকানার ভিন্ন কারখানায় যেমন হতে পারে, তেমনি ভিন্ন মালিকানার প্রতিষ্ঠানেও হতে পারে। তাই প্রণোদনা এমনভাবে দিতে হবে, যাতে ভিন্ন মালিকানার মধ্যেও সাব–কন্ট্রাক্টিং প্রক্রিয়া স্বীকৃতি পায় এবং সুবিধাটি সর্বজনীন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের মধ্যে ফাস্ট সেল ব্যবস্থায় ক্রয়াদেশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ ব্যবস্থায় আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষ উৎপাদন করে। নিয়ম অনুযায়ী, ক্রয়াদেশ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান নিজে উৎপাদন করতে পারে না। ক্রেতার মনোনীত কারখানায় উৎপাদন করতে হয়। অর্থাৎ উৎপাদক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আলাদা হতে হয়।
ফাস্ট সেলের ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশ—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র—পণ্যের প্রথম বিক্রীত মূল্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এতে শুল্কের ভার কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, কোনো ক্রেতা ১০০ ডলারের ক্রয়াদেশ দিল। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রেতার মনোনীত কারখানায় সাব–কন্ট্রাক্ট দিয়ে উৎপাদন করল। উৎপাদন ব্যয় পড়ল ৯২ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটি আমদানির সময় শুল্কায়ন মূল্য ধরা হয় ৯২ ডলার। ফলে ৮ ডলারের অংশের ওপর শুল্ক দিতে হয় না।

