মাসের পর মাস কম পারফরম্যান্সের পর এবার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ধারাবাহিকভাবে কার্গো হ্যান্ডলিং এবং জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত টার্মিনালটি কেবল রপ্তানি কনটেইনার পরিচালনা করতে পারত। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এখানে ১ লাখ ৮ হাজার ২২৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা টার্মিনালের প্রথম ১৬ মাসের মোট হ্যান্ডলিংয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
মাসওয়ারি হ্যান্ডলিংও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। মে মাসে ১৩,৩১৪ টিইইউএস, জুনে ১৪,৫২৭, জুলাইয়ে ১৫,৩৯৬ এবং আগস্টে বেড়ে ২২,৬৩৬ টিইইউএসে পৌঁছেছে। সেপ্টেম্বর কমে ১৭,৩৩৭ টিইইউএস হলেও অক্টোবরে নতুন রেকর্ড করে ২৫,০১৮ টিইইউএস।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা আমদানি স্ক্যানারটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নিজস্ব অর্থে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারে গত মে মাসে টার্মিনালে স্থাপন করে। এই স্ক্যানার টার্মিনালের কার্যক্রমে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। তবে গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য নতুন সরঞ্জাম এখনও আসছে।
আরএসজিটিআই জানায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২২ বছরের কনসেশন চুক্তিতে পরিচালিত এই টার্মিনাল এখনো আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য বড় ধরনের কনটেইনার দক্ষভাবে হ্যান্ডল করা, যাতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বা কনটেইনারের জট কমে। জাহাজ আগমনও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু আগস্টে সাতটি জাহাজ ভিড়েছে। ছয় মাসে রপ্তানি কনটেইনারের পরিমাণ ৫৩,৩৩২ টিইইউএস, আর আমদানি ৫৪,৮৯৬ টিইইউএস।
তবে এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও টার্মিনাল এখনও নকশাগত সক্ষমতার অনেক নিচে কাজ করছে। আগস্টের সর্বোচ্চ পর্যায়ে টার্মিনালটির মাসিক সক্ষমতার মাত্র ৫৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। সেপ্টেম্বর নেমে আসে ৪২ শতাংশে, অক্টোবর ৪৯ শতাংশে। নতুন টার্মিনালে অনেক শিপিং লাইন এখনও নিয়মিত জাহাজ শিডিউল করছে না। ইতোমধ্যে ১৪টি রাবার-টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন এসে পৌঁছেছে। চারটি শিপ-টু-শোর (এসটিএস) ক্রেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে চালু হওয়ার কথা। আরএসজিটিআই জানায়, ২০২৬ সালের মধ্যভাগে টার্মিনাল পুরো সক্ষমতায় পৌঁছাবে।
চট্টগ্রামের কমার্শিয়াল ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান সৈয়দ আরেফ সরওয়ার বলেন, “প্রথম নয় মাস শুধু রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডল করেছি। স্ক্যানার না থাকায় আমদানি কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। মে মাস থেকে হ্যান্ডলিংয়ের গতি বাড়েছে। অক্টোবরে ১৪টি আরটিজি এসেছে, চারটি কমিশনিং সম্পন্ন। আগামী বছরের এপ্রিল ও জুনে এসটিএস গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু হবে। আমরা ২০২৬ সালের জুনে পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখছি।”
তবে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি জানান, একটি ট্রেইলারের কনটেইনার স্ক্যানারে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট লাগে, কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা ছাড় দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেন। এতে লিড টাইম বেড়ে যায়। আরেফ সরওয়ার বলেন, টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অন্যান্য টার্মিনালের তুলনায় দ্রুতগতিতে কাজ করছে। সিপিএ ঘণ্টায় ২৭ মুভস করলে পতেঙ্গায় হচ্ছে ৪৭ মুভস। তবে যানবাহন ছাড়তে বিলম্ব হলে সামগ্রিক পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে।
প্রাথমিক সময়ে এলসিএল (লেস দ্যান কনটেইনার লোড) কনটেইনারে সীমিত স্টোরেজ ক্ষমতা সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। “শেডের ক্ষমতা ১০০ টিইইউএস ছিল, সম্প্রতি ৩০০ টিইইউএসে সম্প্রসারণ করেছি। কাস্টমস এজেন্ট ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য সুবিধা যোগ করেছি।”
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, “সব সরঞ্জাম স্থাপনের পর সৌদি অপারেটর পুরোপুরি টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এটি আশাব্যঞ্জক প্রকল্প, তবে আগামী বছরগুলোতে পারফরম্যান্স দেখার বিষয়।”
এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ও মুখপাত্র এইচ এম কবির জানান, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।”

