যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। এই শুল্ক কার্যকর থাকলে মেক্সিকোর বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
ভারতের সঙ্গে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে মেক্সিকোর। সেই ঘাটতি কমাতেই ট্রাম্প আমলের নীতির মতো করে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর এই উচ্চ শুল্ক বসানো হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোল জানিয়েছে, মেক্সিকোর এ সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লিও কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছে। শুল্ক আরোপের জবাবে ভারত নিজেদের রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে পারে বলে জানিয়েছে সরকার। এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভারতীয় রপ্তানি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে মেক্সিকোর সিনেট একটি নতুন শুল্ক ব্যবস্থা অনুমোদন করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই শুল্ক ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ নেই, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে অংশীদারত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এতে দুই দেশের ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
এই শুল্কের প্রভাব কমাতে ভারত ইতিমধ্যেই মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে। লক্ষ্য ছিল ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের জন্য বিশেষ ছাড় নিশ্চিত করা। ওই কর্মকর্তা জানান, ভারতের বাণিজ্য দপ্তর মেক্সিকোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে।
একই সঙ্গে দুই দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আলোচনা শুরু করতে প্রয়োজনীয় শর্তাবলি দ্রুত চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য এই শুল্কের ঝুঁকি কমতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারতের বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল ও মেক্সিকোর উপ-অর্থমন্ত্রী লুইস রোসেন্ডোর মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও প্রযুক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হলেও ভারত তার রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, এই শুল্কের প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় পণ্যের গুরুত্ব কতটা এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলো শুল্ক ছাড় আদায় বা বাড়তি খরচ মেক্সিকোর ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে কতটা সক্ষম, তার ওপর।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সতর্কবার্তার পরই মেক্সিকো এই শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সস্তা চীনা পণ্য মেক্সিকো হয়ে আমেরিকার বাজারে ঢুকছে। মেক্সিকো সরকার এই শুল্ককে তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্প সুরক্ষা, কর্মসংস্থান রক্ষা এবং সস্তা আমদানির কারণে তৈরি হওয়া বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করার পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের (এফআইইও) ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সাহাই বলেন, এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে একাধিক খাতে। এর মধ্যে রয়েছে অটোমোবাইল, অটো যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, অর্গানিক কেমিক্যাল, ওষুধ, টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক শিল্প। পিটিআইকে দেওয়া এক বক্তব্যে সাহাই বলেন, এত বেশি শুল্ক ভারতের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটার ঝুঁকিও বাড়াবে।
বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত মেক্সিকোতে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে মেক্সিকো থেকে ভারতে আমদানি হয়েছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এই পরিস্থিতিতে ভারত ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনাও যুক্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব আলোচনা বাড়তে থাকা শুল্কের চাপের মধ্যেও দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের স্বার্থ সুরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

