টানা চার মাস ধরে দেশের রফতানি আয় কমছে, কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রফতানি ও আমদানির এ বিপরীত প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বাণিজ্যে চাপ তৈরি করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৭৫৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৬৬৮ কোটি ডলার। এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে ৮৯ কোটি ডলার।
সেবা খাতে (সার্ভিস) ঘাটতিও বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ঘাটতি ছিল ১৪৭ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৬ কোটি ডলার, যা ৪৮ কোটি ডলারের বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪.৯০ শতাংশ। কিন্তু আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রফতানি কমেছে। আগস্টে কমেছে ২.৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪.৬১ শতাংশ ও অক্টোবরে ৭.৪৩ শতাংশ। জুলাইয়ে গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হওয়ায় সার্বিক রফতানি এখনো সামান্য ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি হয়েছিল ১,৪২৮ কোটি ডলারের পণ্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছে ১,৪৫৪ কোটি ডলার। এ সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১.৮ শতাংশে। যেখানে রফতানি স্থবির, সেখানে আমদানি বেড়েছে ৫.৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ব্যয় ছিল ২,৯০৬ কোটি ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,২১১ কোটি ডলার।
তবে বড় আশা জাগাচ্ছে প্রবাসী আয়। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যেখানে প্রবাসী আয় হয়েছিল ৮৯৩ কোটি ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০১৫ কোটি ডলারে, যা ১৩.৫ শতাংশ বেশি। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে প্রবাসী আয় ছিল ১৩৮ কোটি ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ১৭০ কোটি ডলার। প্রবাসী আয়ই রফতানি স্থবিরতার সময়েও বৈদেশিক হিসাবের ভারসাম্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩২.১২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। (বিপিএম৬ হিসাবায়ন পদ্ধতিতে ২৭.৪৫ বিলিয়ন ডলার)।
বাণিজ্য ঘাটতি বেড়লেও প্রথম চার মাসে সার্বিক বিওপিতে উদ্বৃত্ত ১০৮ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে বিওপি ঘাটতি ছিল ২১৯ কোটি ডলার। রাষ্ট্রীয় আর্থিক হিসাবেও অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ছিল ৪৯ কোটি ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ২১৭ কোটি ডলার। মূলত এফডিআই, বিদেশি অনুদান ও ঋণের ওপর নির্ভর করে আর্থিক উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেন এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। সার্বিক বিওপিতে ১ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। রফতানি পুনরায় গতি পেলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমবে।’

