২৪ অক্টোবর ২০২৪, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শিল্প প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ঠেকাতে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি, ২০০৩ সালে বরাদ্দকৃত ২৪টি প্লটের শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দ বহাল থাকবে বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে গণমাধ্যমে “রাস্তাকে প্লট বানিয়ে ভাগাভাগি” এবং “সড়ক প্রকল্প রাতারাতি হয়ে গেল শিল্প প্লট” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিতভাবে রুল জারি করেন। রুলে শিল্প প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর যথাযথ পর্যালোচনা ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে, হাইকোর্ট পাঁচ সচিবের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়মের তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে আদালতে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও পরবর্তীতে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই মামলা পরিচালনার অংশ হিসেবে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) মামলায় হস্তক্ষেপকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যোগ দেয়। সংস্থাটি আদালতের কাছে শিল্প প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানায়। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বরাদ্দপ্রাপ্ত ৪৩৫ প্লটের বর্তমান অবস্থা, জমি অধিগ্রহণের কাগজপত্রসহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
দীর্ঘ শুনানির পর, আজকের রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে বলেন যে, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দের সময় কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।
বরং কথিত একটি কমিটির মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারীভাবে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়, যেসব মালিক বরাদ্দের শর্ত লঙ্ঘন করে এখনো শিল্প নির্মাণে অগ্রসর হননি, তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর যৌক্তিক কারণ পাওয়া গেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি, দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারলে সরকারের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও নিশ্চিত করা হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন এবং বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন মোশাররফ হোসেন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাগিব রউফসহ অনেকে। অন্যদিকে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন নজরুল ইসলাম খন্দকার ও সুকুমার বিশ্বাস।
এই রায়ে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত প্লটগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হওয়ায় এগুলো বরাদ্দে একটি স্বচ্ছ নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি। নীতিমালার অধীনে ভবিষ্যতে যে কোনো শিল্প প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এইচআরপিবির প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, “অনেকেই চুক্তি ভঙ্গ করে শিল্প নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেননি। আদালত এবার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছেন, তারা আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মনজিল মোরসেদ আরও জানান, “আদালত আজকের রায়ে স্পষ্ট করেছেন যে, শিল্প প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ নীতিমালা থাকা আবশ্যক এবং তা প্রচারের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পরবর্তী প্লট বরাদ্দের আগে নীতিমালা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান অনিয়মের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের এই রায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।