খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার, সমিতির সাধারণ সভায় সদস্যদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চুর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সভায় সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিতের প্রস্তাব উঠে আসে।
এডহক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল হোসেন রুবা জানান, দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই সাইফুল ইসলামের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। অভিযোগ রয়েছে, কল্যাণ তহবিল থেকে ৭৪ লাখ টাকা সহ বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি অনুদান ও আইনজীবীদের চেম্বার বরাদ্দের নামে ৩৪ জনের কাছ থেকে ৬৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলছে। রুবা আরও বলেন, ভুয়া ভাউচার তৈরির মাধ্যমে অনেক অর্থ লোপাটের প্রমাণ মিলেছে এবং তদন্তাধীন এই জটিল পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
শনিবার সমিতির ১০১ জন সাধারণ আইনজীবী একটি দরখাস্ত জমা দেন, যেখানে সাইফুল ইসলামের দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববারের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্বাচন স্থগিত থাকবে। আইনজীবীরা এ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছালে এডহক কমিটিও তা মেনে নেয়।
রুবা আরো বলেন, “সাধারণ জনতা যখন সমিতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন, তখন সাইফুলের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা হলেও অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।” তিনি অভিযোগ করেন, সাইফুল নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপে প্রভাবশালী পদে আছেন এবং এ প্রভাব কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। তবে খুলনার আইনজীবীরা একমত যে, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পুরোপুরি তদন্ত এবং উপযুক্ত বিচারের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ আইনজীবী লস্কর শাহ আলম জানান, ৫ আগস্টের পর নতুন এডহক কমিটি গঠিত হয়, যাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল এক মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু তারা সময় বাড়াতে একটি সাধারণ সভার আয়োজন করে। পূর্ব নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হবার কথা থাকলেও, রিকুইজিশন মিটিংয়ের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে এ তফসিল বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এডহক কমিটির আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় থেকে সব নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার চেষ্টা করছে।”
পাঁচ সদস্যের এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সমিতির সদস্যরা নানা বিরোধে লিপ্ত ছিলেন। জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সেখ আব্দুল আজিজ তফসিল ঘোষণা করেন এবং আগামী ২৪ নভেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে তদন্তের চাপে ও সাধারণ আইনজীবীদের অনুরোধে এ তফসিল আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির এ নির্বাচন স্থগিতের পরবর্তী পরিস্থিতি এখন অপেক্ষাকৃত অস্থির এবং বিষয়টি নিয়ে আরও জটিলতা ও আলোচনা তৈরি হতে পারে।