প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারকদের বদলি ও পদায়নে অভিন্নতা বজায় ও সামঞ্জস্যতা আনয়নের মাধ্যমে দক্ষ বিচার প্রশাসন গঠনের উদ্দেশ্যে এই নীতিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিম্ন আদালতে কর্মরত কোন বিচারক প্রতিটি কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তবে প্রধান বিচারপতির নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোন বিচারক কোন বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন বা কোন বিচারক বদলি হলে বিচার প্রশাসনে ব্যাঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে সেক্ষেত্রে উক্ত বিচারক আরও এক বছর উক্ত কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এমন কোন কর্মস্থলে (আদালত/ট্রাইব্যুনাল) বিচারককে বদলি করা যাবে না যেখানে তার স্বামী/স্ত্রী, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন, পিতামহ ও মাতামহ আইন পেশায় নিযুক্ত রয়েছে। এছাড়া সহকারী জজ হিসাবে যোগদানের পূর্বে কোন আইনজীবী সমিতিতে দুই বছর আইন পেশা পরিচালনা করলে চাকরিতে যোগদানের তারিখ হতে পরবর্তী দশ বছর উক্ত জেলায় তাকে পদায়ন করা যাবে না। কোন জেলায় ক্রয়সূত্রে দশ শতাংশের অধিক কৃষি বা অকৃষি ভূমির মালিক থাকলে উক্ত বিচারককে ওই জেলায় পদায়ন করার সুযোগ নাই। রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। এই নীতিমালার ওপর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সকল জেলা ও দায়রা জজ/সমপর্যায়ের বিচারকবৃন্দকে তাদের মতামত লিখিতভাবে ৭ নভেম্বরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকের পদায়নের মেয়াদকাল হবে সর্বোচ্চ এক বছর। বিচারকদের ফিট লিস্ট ছয় মাস অন্তর অন্তর পরিমার্জন করতে হবে। কোনরূপ ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে বিচারকদেরকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে পালাক্রমে বদলি করতে হবে। কোন কর্মস্থলে একজন বিচারককে একাদিক্রমে দু’বার বদলি/পদায়ন করা যাবে না। এছাড়া স্থানীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ তথা জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদে পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে প্রস্তুতকৃত ফিট লিস্ট অনুসরণ করতে হবে। মোট চাকরিকালে কোন বিচারক তিন মেয়াদের বেশি প্রেষণে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বদলি প্রস্তাবের সময় বিচারকের সততা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা বিবেচনা করতে হবে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়ার কুফল গত দেড় দশক ধরে আমরা সবাই ভোগ করেছি। এছাড়াও অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিচারকরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে একটি উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি। এরপরই এ বিষয়ে কাজ শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রণয়ন করা হয় খসড়া নীতিমালা। বিচারকরা বলছেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিচারকদের হয়রানিমূলক বদলি ও পদায়ন বন্ধ হবে।
এই নীতিমালায় যা কিছুই থাকুক না কেন প্রধান বিচারপতি উপযুক্ত মনে করলে কোন বিচারকের বদলি বা পদায়নের ক্ষেত্রে এই নীতিমালায় বর্ণিত শর্তসমূহ শিথিল করতে পারবেন।