ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। যেখানে জাতীয় সংসদের পাশাপাশি উচ্চকক্ষ হিসেবে জাতীয় পরিষদ গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত ‘খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে ল রিপোর্টার্স ফোরাম। অনুষ্ঠানে খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ফোরামের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক-এর নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন।
প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে। এ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।
বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও প্রতিনিধিত্বমূলক করতে সংবিধানে প্রস্তাবিত এই পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত কাঠামোয় একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ থাকবে ৩০০ সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সদস্যরা থাকবেন। তবে নতুনভাবে প্রস্তাবিত জাতীয় পরিষদে ২০০ সদস্য থাকবেন, যারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।
জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মধ্যে থাকবেন:
– ৬৪ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
– ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র।
– ২৫ সংরক্ষিত নারী সদস্য।
– ১০ জন রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রতিনিধি, যারা উপজাতি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
– বাকি ৮৯ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে।
জাতীয় পরিষদের ভূমিকা হবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা নির্ধারণ ও জাতীয় সংসদের পাশ করা আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া।
সংবিধানের নতুন প্রস্তাবনার বিশেষ ধারা-
১. নির্বাচনী পরিবর্তন:
– কোনো নির্বাচনে ৫০% ভোট না পড়লে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
– নারী সংরক্ষিত আসন জাতীয় সংসদে থাকবে না। তবে দলগুলোকে ১০% নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে।
২. গ্রেফতার ও অধিকার:
– গুরুতর অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না।
– অহেতুক হয়রানি বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
৩. মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে গণভোট:
– সংবিধানের প্রস্তাবনা বা মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে গণভোটের বাধ্যবাধকতা থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতামত-
আলোচনায় অংশ নেওয়া সংবিধান বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করলেও কিছু বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাদের মতে, এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক ঐক্যমত, সংশ্লিষ্ট আইন পাস এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রস্তাবিত ব্যবস্থা রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ল রিপোর্টার্স ফোরামের এই প্রস্তাবনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবিধান সংস্কারের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।