আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে কারিগরি ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এসা এম্বে ফাল বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার কোনো অনুরোধ এলে আইসিসি তা সানন্দে গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসা ফাল জানান, আইসিসি সব সময় তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। বিশেষত, ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া এবং কারিগরি বিষয়ে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে আইসিসি তা সরবরাহ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, “আমাদের দরজা সব সময় খোলা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ আসলে, আমরা দ্রুত সাড়া দেব।”
১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আইসিসির সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন এসা ফাল। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটাই প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন।
গতকাল দুপুরে এক ভিডিও বার্তায় করিম খান বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রাখাইনে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরোয়ানা জারির বিষয়ে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
কত দিনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে?
এ প্রশ্নে এসা ফাল বলেন- “এটি বিচারকদের এখতিয়ার। সাধারণত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণের যথেষ্ট ভিত্তি থাকায় পরোয়ানা প্রত্যাখ্যান হওয়ার আশঙ্কা নেই।”
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও এর কার্যকারিতা-
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানা যায়, মিয়ানমার রাষ্ট্রপক্ষ না হওয়ায় আইসিসির পরোয়ানার আইনি বাধ্যবাধকতা সেখানে প্রযোজ্য নয়। তবে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলে কী হবে, সে বিষয়ে এসা ফাল বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতি আইসিসির ইতিহাসে নতুন। তবে আদালত এই প্রথমবারের মতো অনুপস্থিতির ভিত্তিতেও বিচার শুরু করতে পারে।”
করিম খানের বাংলাদেশ সফর-
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সোমবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক ছিল সফরের মূল উদ্দেশ্য। যদিও সফরটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যায়, তবুও এতে আইসিসির অবস্থান এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সহযোগিতার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়।
করিম খানের সংক্ষিপ্ত সফর এবং পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আলোচনায় এটি স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচার প্রক্রিয়ার উন্নয়নে এই সহযোগিতা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।