সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ কমিশনে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আইনজীবী সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
গতকাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রস্তাবিত কমিশনে আইনজীবী প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি কমিশনের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এতে স্বার্থের সংঘাত ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বাড়বে বলে তারা মনে করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারকদের উপস্থিতি যেখানে যথেষ্ট, সেখানে আইনজীবী প্রতিনিধিকে কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতা নেই। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার উদাহরণ অতীতে বহুবার দেখা গেছে। ভবিষ্যতেও এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে কমিশনে আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্তি বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন আরও দাবি করে, জেলা আদালতের বিচারকদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বিচারক উচ্চ আদালতে নিয়োগ দিতে সুস্পষ্ট বিধান প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি, বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ন্যায্য নীতিমালা তৈরির ওপরও তারা জোর দিয়েছেন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি অধ্যাদেশ ইতোমধ্যে আইন ও বিচার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তবে এ প্রস্তাব জেলা আদালতের বিচারকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তাদের আশঙ্কা, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা আগের মতোই উচ্চ আদালতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈষম্যের শিকার হতে পারেন।
জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী কিংবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা না গেলে তা বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন গঠনে এমন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে- যা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত।
বিচার বিভাগে দীর্ঘমেয়াদে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।