বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের ২৪২ সদস্যকে গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে ৭২.৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে এই অর্থ আইন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ছাড় করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে অর্থ বিভাগ সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার সুদমুক্ত ঋণ সুবিধায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেয়। এরপর ১২ ডিসেম্বর আইন ও বিচার বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়, জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ এবং ১৫ বছর চাকরিকাল পূর্ণ করেছেন এমন যুগ্ম জেলা জজরা এই সুবিধা পাবেন।
এছাড়া যেসব বিচারকের চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে এক বছর রয়েছে তারাও এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। একইসঙ্গে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব, যিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনিও এই সুবিধার আওতায় থাকবেন।
তবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে যদি কোনো কর্মকর্তা গাড়ি সুবিধা নিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। পাশাপাশি লিয়েন বা চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে থাকা কর্মকর্তারাও এই সুবিধা পাবেন না। অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পরপরই ২৪২ জন বিচারককে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পূরক বাজেটে এই বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে।
ঋণ নীতিমালার আওতায়, প্রতিটি বিচারক গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়ে থাকেন এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আইন ও বিচার বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের মধ্যে ৩১৫ জন জেলা জজ, ৩৪২ জন অতিরিক্ত জেলা জজ এবং ১৫ বছর চাকরি সম্পন্ন করেছেন এমন ২৫ জন যুগ্ম জেলা জজ রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৪০ জন বিচারক সরকারি টিওএন্ডইভুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন। নতুন এই ঋণ সুবিধার ফলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সকল যোগ্য কর্মকর্তা গাড়ি সুবিধার আওতায় আসবেন।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে এই ঋণ সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, সচিবালয়ের উপসচিবদের জন্য গাড়ি কেনার ঋণ এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও অন্যান্য সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের জন্য এই সুবিধা নেই। ফলে এ ব্যবস্থাটি বাতিল করা হলে প্রশাসনে বৈষম্য দূর হবে এবং সরকারের ব্যয় সংকোচন সম্ভব হবে।
সরকার বর্তমানে রাজস্ব আয়ের ঘাটতির কারণে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ফলে সরকারি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন গাড়ি কেনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
তবে অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের সুবিধা আদায় করছে। জুডিশিয়াল সার্ভিসের এই ঋণ সুবিধা সেই চাপেরই একটি ফলাফল। আগের সরকারের সময় এই ঋণ সুবিধা ধাপে ধাপে অন্যান্য খাতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ছিল তবে তা রাজস্ব আয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকার কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির সঙ্গে এসব সিদ্ধান্ত কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা চালু করে। তখন সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশক্রমে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিবরা এই ঋণের আওতায় আসেন।
পরবর্তী সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হন যা অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।