রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা পৃথক দুটি মামলায় এসব পরোয়ানা জারি করা হয়।
১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের দাখিল করা চার্জশিট আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন। আদালত জানায়, আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম এবং সাবেক সদস্য শফি উল হক।
দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, তা জানাতে আগামী ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকার মূল্যবান প্লট নিজের নামে গ্রহণ করেন। অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামেও ঢাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও সে তথ্য গোপন রেখে তারা পূর্বাচল থেকে প্লট বরাদ্দ নেন। বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় আইন, বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এতে গৃহায়ন মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারি দায়িত্বে বহাল থাকা অবস্থায় সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর প্লট রেজিস্ট্রির মাধ্যমে নিজের নামে গ্রহণ করেন। এই বরাদ্দকে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের আওতায় তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চার্জশিট গত মাসের প্রথমার্ধে আদালতে জমা দেয় দুদক।
এ ছাড়া একই আদালত ১০ এপ্রিল পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তী সময়ে ১৩ এপ্রিল আরও তিনটি পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধেও একই আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ মামলাগুলোতে মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পদের অবৈধ বরাদ্দ এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।