অনলাইন জুয়া বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। এই নোটিশে অবিলম্বে অনলাইন জুয়া সংশ্লিষ্ট সব ওয়েবসাইট, অ্যাপ, লিংক এবং অর্থ লেনদেন গেটওয়ে বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে জুয়ার প্রচার-প্রসারে যুক্ত তারকা, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পাঠানো এই আইনি নোটিশটি ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের বরাবর। জনস্বার্থে পাঠানো এই নোটিশে বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়া বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এবং তা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা অবৈধ এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে দেশে অনলাইন জুয়া দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। সহজলভ্য স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীরাও জুয়ার ফাঁদে পড়ছে। অনেকেই সর্বস্ব হারাচ্ছে পরিবারে ধ্বংস নেমে আসছে।
নোটিশে আরো জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু বিদেশি কোম্পানি দেশীয় চক্রের সহযোগিতায় অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। উদ্বেগের বিষয় হলো দেশের অনেক জনপ্রিয় তারকা এবং শোবিজ মডেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। ফেসবুক পেজ বা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা অর্থের বিনিময়ে এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন। এমনকি কিছু টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও জুয়ার বিজ্ঞাপন ছড়ানো হচ্ছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মডেল পিয়া জান্নাতুল, শবনম বুবলি, সামিরা খান মাহি, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি এবং অপু বিশ্বাসসহ একাধিক তারকা বিভিন্ন সময় তাদের ফেসবুক পেজে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে এর প্রসারে ভূমিকা রেখেছেন। ওয়ানএক্সবেটসহ বিভিন্ন অনলাইন ক্যাসিনো ও অ্যাপে স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করা হচ্ছে। এই চক্রে স্থানীয় এজেন্টরাও জড়িত বলে গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইনে জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ৯২ ধারা এবং দণ্ডবিধির ২৯৪(এ) ও ২৯৪(বি) ধারায় জুয়া খেলা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে যেকোনো ধরনের জুয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাংবিধানিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০০১ সালের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৯ ও ৩০ ধারায় নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অপরাধমূলক ও ক্ষতিকর উপাদানে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
নোটিশে অনলাইন জুয়া রোধে সরকারের সামনে পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রথমত, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব লিংক, ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন এবং গেটওয়ে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গুগলসহ সব ইন্টারনেট কোম্পানিকে অনলাইন জুয়ার কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, জুয়ার প্রচারে যুক্ত তারকা, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি এবং ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। চতুর্থত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে অনলাইন জুয়া সাইট বা লিংকে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। পঞ্চমত, অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনি নোটিশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তবে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জানিয়েছেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা এবং অর্থ পাচার রোধে এখনই সময় অনলাইন জুয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।