জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় এভিয়েট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রোপাইটর নুরুল আমিনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক জাকারিয়া হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে নুরুল আমিনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ অনাদায়ে তাকে আরও পাঁচ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি সম্পদের তথ্য গোপনের অপরাধে তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাকে আরও তিন মাস সশ্রম কারাদণ্ডে পাঠানো হবে।
তবে দুটি ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, ফলে তাকে মোট পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম।
এছাড়া, মামলার রায়ে আদালত ৯৩ লাখ ২২ হাজার ১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামি নুরুল আমিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পরপরই তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই নুরুল আমিনকে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ পাঠায় দুদক। তিনি ২০১০ সালের ২২ আগস্ট হিসাব বিবরণী দাখিল করেন, যেখানে তিনি মোট ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার ১২৭ টাকার সম্পদের বিবরণ দেন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৮২৭ টাকার স্থাবর ও ৭৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০০ টাকার অস্থাবর সম্পদের উল্লেখ ছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই বিবরণীতে ৯২ লাখ ৮১ হাজার ১৭ টাকার সম্পদ ছিল জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থাৎ এসব সম্পদের যথাযথ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।
এই প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৭ আগস্ট রমনা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। বিচার শেষে আদালত মঙ্গলবার নুরুল আমিনকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেন।
দুদক সূত্র বলছে, এ রায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।