বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য পারিবারিক আইন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ বিষয়ে যত বেশি প্রস্তুতি, সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বেশি। এজন্য দরকার পরিকল্পিত, গোছানো এবং স্মার্ট প্রস্তুতি। ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. মেহেদী হাসান তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, কীভাবে পারিবারিক আইনে কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
লিখিত পরীক্ষা সাফল্যের মূল চাবিকাঠি
বিজেএস পরীক্ষায় লিখিত অংশেই সাফল্যের আসল প্রতিযোগিতা। প্রিলিমিনারি শুধু লিখিত পরীক্ষায় বসার টিকিট। এর নম্বর চূড়ান্ত ফলে যোগ হয় না। চূড়ান্ত ফল তৈরি হয় লিখিত (১০০) এবং ভাইভা (১০০) মিলিয়ে। তাই প্রিলিমিনারিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেলেও তা কাজে আসে না। প্রয়োজন কেবল ৫০ নম্বর পেয়ে লিখিত অংশে যোগ্যতা অর্জন করা।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রিলিমিনারিতে পারিবারিক আইনে সাধারণত ১০টি প্রশ্ন থাকে। লিখিত অংশের পড়াশোনা ভালো থাকলে এখানে সহজেই ৮–১০ নম্বর পাওয়া যায়। তাই মূল ফোকাস রাখতে হবে পারিবারিক সম্পর্কবিষয়ক আইনের ওপর।
প্রস্তুতির জন্য নজর দেওয়া উচিত:
- ইংরেজি শব্দের আরবি টার্ম
- সংখ্যাভিত্তিক সেকশন বা বিধান (ইদ্দতের সময়কাল, আপিল/রিভিশনের মেয়াদ ইত্যাদি)
- বিবাহ ও নিবন্ধন, ইদ্দত, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ
- বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার, দান, উইল, দত্তক, ওয়াক্ফ ও অগ্রক্রয়
সহায়ক বই হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের আইন পাঠ (২য় খণ্ড) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের অনুশীলন প্রশ্নগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। পাশাপাশি লিগ্যাম ডাইজেস্ট ও প্রিলিমাস্টারও কাজে আসতে পারে।
লিখিত অংশের প্রস্তুতি
লিখিত অংশে পারিবারিক আইন থেকে মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। এটি তিন ভাগে বিভক্ত:
১. মুসলিম আইন (৬০ নম্বর)
- উৎস, বিভিন্ন স্কুল, বিবাহ, নিবন্ধন, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার
- দেনমোহর, ভরণপোষণ, বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব
- উত্তরাধিকার, দান, উইল, ওয়াক্ফ, অগ্রক্রয়
৫টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হয়। উত্তরাধিকার নির্ণয়ের প্রশ্ন বাধ্যতামূলক। সঠিকভাবে সমাধান দিলে পূর্ণ ২০ নম্বর পাওয়া সম্ভব। এজন্য কোরানিক শেয়ারার, আসাবা, আউল, রাদ এবং ব্যতিক্রম নিয়মগুলো অনুশীলন করা জরুরি।
সহায়ক বই: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকরামুল হক স্যারের Muslim Inheritance। সময় কম থাকলে ইউটিউবে তাঁর ভিডিওগুলো কাজে লাগতে পারে। অন্য অংশের জন্য মুল্লাহ থেকে অনূদিত বাংলা বই সহায়ক।
২. হিন্দু আইন (২০ নম্বর)
এখানে ২টি প্রশ্নের মধ্যে ১টির উত্তর দিতে হয়। সাধারণত সম্পত্তি বণ্টন-সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে, যা প্রায় ১২ নম্বরের। সঠিকভাবে উত্তর দিলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। এছাড়া উৎস, বিবাহ, দত্তক, দান, উইল, উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ও যৌথ পরিবার বিষয়ক প্রশ্ন আসতে পারে।
সহায়ক বই: আজিজুল হকের ইংরেজি হিন্দু আইন এবং শ্রী দীনেশচন্দ্র দেবনাথের বাংলায় লেখা হিন্দু আইন।
৩. অন্যান্য আইন (২০ নম্বর)
তিনটি ছোট আইনের মধ্যে থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ভালো প্রস্তুতি থাকলে সহজেই ৮০% নম্বর পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো হলো:
- The Muslim Family Laws Ordinance, 1961 → ধারা ৪, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১১(ক)
- পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ → পুরোনো আইন The Family Courts Ordinance, 1985 এর সঙ্গে তুলনা করে পড়তে হবে। বিশেষভাবে সংশোধিত ধারা যেমন ধারা ৯ গুরুত্বপূর্ণ।
- The Dissolution of Muslim Marriage Act, 1939 → ধারা ২, ৩, ৪ ও ৫ গুরুত্বপূর্ণ।
বিজেএস পরীক্ষায় সাফল্য পেতে হলে পারিবারিক আইনে পরিকল্পিত পড়াশোনা অপরিহার্য। প্রিলিমিনারিকে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে নিয়ে লিখিত অংশে শক্তিশালী প্রস্তুতিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বই, অনুশীলন ও সঠিক কৌশলই পরীক্ষার্থীদের এগিয়ে নেবে।

