হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ কে আইন হিসেবে ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নীতিমালাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্তও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন হিসেবে প্রযোজ্য হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। বুলিংয়ের ঘটনায় মইনুল এহসান মাহির বদলির আদেশ বহাল রাখার রায় দিয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ—বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম।
হাইকোর্টের ১৭ দফা নির্দেশনা:
১. ৩-৫ সদস্যবিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে।
২. প্রতি শিক্ষাবছরের শুরুতে এবং পরবর্তী সময়ে ৩ মাস অন্তর অন্তর সভা, সেমিনার বা ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে হবে।
৩. অভিযোগ বক্স উন্মুক্ত স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন শেষে অভিযোগ প্রাপ্ত হলে পরের দিন তা প্রধানের কাছে পাঠাতে হবে।
৪. বুলিং বা র্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি রাখতে হবে।
৫. ঘটনার প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে।
৬. উদাহরণ ও পরিণতি ওয়েবসাইট বা পোস্টারের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
৭. প্রতি শিক্ষাবছরের শুরুতে একদিন বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ দিবস পালন করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করবে, কোনো বুলিং দেখলে তা রিপোর্ট করবে।
৯. সহপাঠ্যক্রমিক কর্মশালার মাধ্যমে অনলাইন আচরণ ও বুলিংয়ের কুফল শেখাতে হবে।
১০. শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
১১. রোল-প্লে মাধ্যমে শিক্ষকরা বুলিং ও র্যাগিংয়ের কুফল উপস্থাপন করবেন।
১২. বিশেষ শিক্ষার্থী কাউন্সেলর প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠান প্রধান নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
১৪. কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বুলিং ও র্যাগিং পর্যবেক্ষণ করবে।
১৫. শিক্ষক বা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৬. কমিটি বা বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী মামলা করা হবে।
১৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি ৩ মাসে কার্যক্রম ও নির্দেশনার রিপোর্ট শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দেবে।
অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া:
১. বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ ই-মেইল বা লিখিতভাবে প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে।
২. ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির কাছে পাঠাতে হবে।
৩. তদন্ত প্রতিবেদন ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে।
৪. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ৩৫৪, ৫০৩, ৫০৪ ও ৫০৯ অনুযায়ী মামলা দাখিল করতে হবে।
৫. দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে প্রধানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
হাইকোর্টের পরামর্শ:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে সৎ, দক্ষ ও সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- জাতীয় কমিটি গঠন করে নীতিমালা হালনাগাদ ও যুগোপযোগী করতে হবে। মেয়াদ ৩ বছর।
- ৩ মাস অন্তর অন্তর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা দ্রুত পূর্ণ আইনের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, চরিত্র মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সুন্দর চরিত্র মানুষকে সমাজে সম্মানিত করে, আত্মবিশ্বাস দেয় এবং জীবনে সাফল্য আনে। পরিবার, শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের সহযোগিতায় একটি শিশুর চরিত্র গড়ে ওঠে। হাইকোর্ট সতর্ক করেছে, যদি পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে, তাহলে সমাজে অশিক্ষিত ও দুশ্চরিত্রবান মানুষ বেড়ে যাবে।

