ঢাকায় জাতীয় সেমিনারে বক্তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দ্রুত অনুমোদন দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, বিলটি পাসে বিলম্ব জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলবে এবং বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য ব্যাহত করবে।
মঙ্গলবার সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিআইআরডিএপি) মিলনায়তনে উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডরপ) এই সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জরুরি প্রয়োজন।”
ছয়টি প্রধান প্রস্তাব
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জোবায়ের হাসান। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খসড়া সংশোধনী থেকে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো—
- গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা বাতিল;
- বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ;
- তামাক কোম্পানির করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR) কার্যক্রম নিষিদ্ধ;
- তরুণদের ই-সিগারেট থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা;
- খুচরা বা সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি বন্ধ;
- প্যাকেটের স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ চিত্র ৫০% থেকে ৯০%-এ উন্নীত করা।
প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, তামাকমুক্ত দেশ গড়তে এই আইন সংশোধন দ্রুত পাস ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি তামাক কোম্পানিকে প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান এবং বিল অনুমোদনে প্রধান উপদেষ্টার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ চান।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশে প্রতিবছর তামাকের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়, যা দৈনিক গড়ে ৪৪২ জন। তিনি জানান, ২০০৫ সালে আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে সংশোধনের পরেও রাজস্ব আয় ১২ গুণ বেড়েছে, যদিও ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তামাক ব্যবহার কমেছে ১৮%। তাই রাজস্ব ক্ষতির দাবিকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন তিনি।
এনডিসি সদস্য ও সাবেক সচিব মুনশি আলাউদ্দিন আল আজাদ ২০২৪ সালের খসড়া সংশোধন নিয়ে তামাক কোম্পানির মতামত নেওয়ার সুপারিশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর ৫.৩ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করে বলেন, তরুণদের মধ্যে সচেতনতা না বাড়ালে আগামী প্রজন্ম হুমকিতে পড়বে। তাই সংশোধনটি অবশ্যই জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রিক হতে হবে এবং তামাক শিল্পের পরামর্শ নেওয়া যাবে না।
তরুণ কর্মী তাবাসসুম খানম রাত্রী এবং সবুর আহমেদ কাজল সংশোধনী বিলটি দ্রুত ও তামাক শিল্পের মতামত ছাড়াই পাস করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডরপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান। তিনি স্বাগত বক্তব্যও দেন।

