দেশের আদালতগুলোতে ৪৫ লাখের বেশি মামলা জটের মধ্যে রয়েছে। তবে সব মামলাই জঘন্য অপরাধ থেকে উদ্ভূত নয়। অনেক সময় অতি সাধারণ কারণে মামলা হয়। এক মামলার সূত্র ধরে আরও মামলা জন্মায়। এর ফলে সামাজিক শান্তি ও পারিবারিক বন্ধন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মাত্র ১০ টাকা খরচে এক মাসেরও কম সময়ে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তারই উদাহরণ হলো গ্রাম আদালত।
আইনজীবী মশিউর রহমান চৌধুরী দৈনিক খবরের সঙ্গে আলাপে বলেন, “ফৌজদারি মামলায় মাত্র ১০ টাকা ফি দিতে হয়। আর দেওয়ানি মামলায় খরচ মাত্র ২০ টাকা।” তিনি ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ – ৩য় পর্যায় প্রকল্প’-এর লিগ্যাল অ্যানালিস্ট।
মশিউর রহমান জানান, “গ্রাম আদালতে মামলা নিষ্পত্তি করতে হয় ৯০ দিনের মধ্যে। তবে ২৮ দিনেও মামলা নিষ্পত্তির উদাহরণ আছে। ব্যক্তি নিজের ইউনিয়নেই থেকে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন। ফলে জেলা সদরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সময় ও খরচ বাঁচে।”
গ্রাম আদালতে পাঁচজন সদস্য থাকেন। একজন চেয়ারম্যান এবং দুই পক্ষ থেকে দুজন করে সদস্য। যদি আবেদনকারী বা প্রতিবাদকারীর মধ্যে কেউ মহিলা হন, তবে অন্তত একজন মহিলা সদস্য থাকবেন। চেয়ারম্যান সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন। তবে কোনো পক্ষ আপত্তি করলে আইন অনুযায়ী অন্য কাউকেও চেয়ারম্যান করা যায়।
এই ব্যবস্থা ছোটখাটো মামলার জন্য নিয়মিত আদালতের চাপ কমায়। জেলা আদালত ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা বড় ও জটিল মামলায় আরও মনোযোগ দিতে পারেন। তাই গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভায় বক্তারা জানান, “অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে চলুন গ্রাম আদালতে।” দেশের ৬১টি জেলায় গ্রাম আদালত সক্রিয় রয়েছে। সভার আয়োজন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি হাসান জাবেদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহফুজা আক্তার। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নাজমুল হুদা শামিম ও ইউএনডিপির হেড অব কমিউনিকেশন্স মো. আব্দুল কাইয়ূম বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট তানভীর মাহমুদ।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে (সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫) গ্রাম আদালতের মাধ্যমে প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে। আগস্ট শেষে এই আদালতে অপেক্ষমাণ মামলা ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯০টি। এর মধ্যে আগের মামলা ১১ হাজার ৫৬২টি। ইউনিয়ন পরিষদে সরাসরি দায়ের করা মামলা ৮৩ হাজার ৮৫৭টি। উচ্চ আদালত থেকে প্রাপ্ত মামলা ৯ হাজার ১৭১টি।
এই সময়ে ৭৯ হাজার ১৫৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ফেরত, বাতিল বা উচ্চ আদালতে প্রেরিত মামলার সংখ্যা ১৫ হাজার ১২৫টি। এই সময়ের শেষে অপেক্ষমাণ মামলা ১০ হাজার ৩০৬টি।

