আপনি থানা বা কোর্টে মামলা করেছেন। পরে হয়তো দাবি মেটেছেন, ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে আপোষ করেছেন, ক্ষমা দিয়েছেন বা ভুলবশত মামলা করেছেন। এখন ভাবছেন কিভাবে মামলা তুলে নিবেন। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আইন অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহার বা তুলে নেওয়ার সুযোগ আছে।
মামলা সাধারণত দুই ধরনের হয়।
- জি.আর মামলা – থানায় হয়।
- সি.আর মামলা – কোর্টে হয়।
জি.আর মামলায় রাষ্ট্র নিজেই বাদীর পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে। তাকে বলা হয় পাবলিক প্রসিকিউটর বা পি.পি।
সি.আর মামলায় নালিশকারী বা বাদী ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করেন।
জি.আর মামলায় মামলা তুলে নেওয়া
- যদি মামলায় আপোষ হয় বা যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে, রাষ্ট্রপক্ষ (পি.পি.) ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন।
- যদি তা সম্ভব না হয়, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এজাহারকারী নিজে বা অন্যান্য সাক্ষীদের মাধ্যমে আপোষমূলে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করে আসামীর খালাস নিশ্চিত করতে পারেন। এমনকি হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
- যদি মনে হয় রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক মামলা প্রত্যাহার করেছে, দায়রা জজ আদালত বা হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করে প্রতিকার নেওয়া যায়।
সি.আর মামলায় মামলা প্রত্যাহার
- নালিশকারী বা তার নিযুক্ত আইনজীবী ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন।
- এটি শুধুমাত্র নিষ্পত্তিযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী)।
- যদি বিচারক আবেদন গ্রহণ না করেন, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এজাহারকারী বা সাক্ষীরা আপোষমূলে সাক্ষ্য প্রদান করে খালাস নিশ্চিত করতে পারেন।
সিভিল মামলার ক্ষেত্রে
- দেওয়ানি মামলা বা জমি-জমার মামলা যেকোনো সময়ে বাদী প্রত্যাহার বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন।
- দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩(১) ধারা এ প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করেছে।
- আদালতকে আইনগতভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে।
মনে রাখার বিষয়
- নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা প্রত্যাহার করলে একই বিষয়ে নতুন মামলা করা যায় না।
- দেওয়ানি মামলায় ‘রেস জুডিকাটা’ নীতি এবং ফৌজদারি মামলায় ‘ডাবল জিওপারডি’ নীতি প্রযোজ্য।
- তবে উচ্চ আদালতে রিভিশন দায়ের করলে আদালত পুনর্বিচার বা পুনর্তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।