সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের বড় ছেলে রন হক সিকদারের মালিকানাধীন জেড এইচ সিকদার শপিং কমপ্লেক্সের জন্য জনতা ব্যাংক এক দশক আগে ঋণ দেয়। ব্যাংক অভিযোগ করেছে, ভবন নির্মাণ না করে তিনি ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত এক টাকাও পরিশোধ হয়নি।
ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৫-এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান গতকাল রোববার আদেশ দিয়েছেন আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পুরো দায় সমন্বয় করতে হবে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের পাওনা ২২২ কোটি টাকা। তবে রন হক সিকদারের মোট ঋণ জনতা ব্যাংকের কাছে প্রায় এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ব্যাংক আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংসের অনুকূলে জেড এইচ সিকদার শপিং কমপ্লেক্সের জন্য ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। ভবন করপোরেট শাখা থেকে এই ঋণ বিতরণ করা হয়। এর বাইরে রন হক সিকদারের মালিকানাধীন পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের কাছে ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৯৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ব্যাংক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্পত্তি বিক্রির নিলাম ডেকে বিপণনের চেষ্টা করে। তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। রন হক সিকদারের ব্যক্তিগত মোবাইলও বন্ধ ছিল।
শপিং কমপ্লেক্সের ঋণ নিয়ে গত মার্চ থেকে তিনি আদালতে হাজিরা দেননি। কোনো আইনজীবীও হাজির করেননি। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, এর আগে ১৫ দিনের নোটিশ এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তবু বিবাদী পক্ষ লিখিত জবাব দেয়নি। একতরফা শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, মামলা দায়েরের দিন থেকে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ১২ শতাংশ সুদসহ দায় পরিশোধ করতে হবে। অর্থ পরিশোধ ব্যর্থ হলে ব্যাংক ডিক্রিকৃত টাকা আদায়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবে। চলতি বছরের ৪ মার্চের ঋণস্থিতি অনুযায়ী, আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংসের অনুকূলে বিতরণ করা ঋণ ছিল ২২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
জনতা ব্যাংকের ঋণ আদায় বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, মার্চে মামলা হয়। আদালত আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ঋণ সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সম্পত্তি এলাকায় নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও নির্ধারিত সময়ে ঋণ আদায় হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে ব্যাংক অন্তত সম্পত্তির মালিকানা নিতে পারবে। প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করে ঋণ আদায় করা হবে। ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। শর্ত ছিল, গ্রাহকের নিজ অর্থ দিয়ে ‘গ্রেড বিম’ পর্যন্ত নির্মাণ করতে হবে। প্রথম ধাপের কাজ সন্তোষজনক হলে দ্বিতীয় ধাপে ৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। প্রতিটি কিস্তির আগে প্রকৌশলী প্রতিবেদন প্রয়োজন। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ করতে শেষ কিস্তির টাকা ব্যবহার করতে হবে। তবে ব্যাংক শর্ত যাচাই ছাড়াই ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে পুরো ১০০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ে।
ঋণের শর্তে বলা হয়, অতিরিক্ত খরচ গ্রাহক বহন করবেন। প্রথম কিস্তির ২৪ মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে হবে। প্রথম কিস্তি ১৫ মাস পর আদায়যোগ্য হবে। ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণ আদায় হবে। পুরো অর্থ পরিশোধ না হলে অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্লোর স্পেস বিক্রির অর্থ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যাংক ঋণ ছাড় দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সিকদার পরিবার প্রভাবশালী ছিল। প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন নিট লোকসানে থাকা ব্যাংক এখনও আমানতকারীর অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না।

