টিভি বিজ্ঞাপন এবং নকশিকাঁথা ক্রয়ের ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংকের করা অভিযোগ অনুযায়ী, টিভি বিজ্ঞাপনের নামে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা, আর ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদের উপহার দেখিয়ে ছয় হাজার ৩৫০টি নকশিকাঁথার জন্য এক কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। তাছাড়া লজিস্টিকস ক্রয়ের নামেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনের নামে আদালতে মামলা করেছে ব্যাংক। পাশাপাশি চারটি অভিযোগ দুদকে পাঠানো হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. এম এ কাসেমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ভূমি ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, অতিরিক্ত সিটিং ভাতা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল সাউথইস্ট ব্যাংকে এফডিআর করার মতো নানা অনিয়মেরও অনুসন্ধান চাওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এম এ কাসেমের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ যাচাইয়ে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যরা হলেন— উপপরিচালক আজিজুল হক, সহকারী পরিচালক মেহেদী মুসা জেবিন ও সহকারী পরিচালক আল-আমিন।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, এম এ কাসেম ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি ক্রয়ের সময় ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি কম মূল্যের জমি বেশি দামে দেখিয়ে ক্রয় দেখান, ডেভেলপার কোম্পানি থেকে কমিশন নেন এবং টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন।
এছাড়া অনলাইন মিটিং করেও সমপরিমাণ সিটিং অ্যালাউন্স নেওয়া, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০৮ কোটি টাকার ফান্ড নিজ মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে এফডিআর করা এবং ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি—এসব বিষয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন দফতরে এসব অনিয়মের অভিযোগ বহুবার জমা পড়লেও, তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এম এ কাসেম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল সংলগ্ন এলাকায় ২৫০ বিঘা নিচু জমি ক্রয়ের সময় প্রায় ৪২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৪ সালে আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভলপার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকার জমি ৫০০ কোটি টাকা দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগও আছে।
নিচু জমি ভরাটের নামে আরও ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য ২৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি রেঞ্জ রোভার ও একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি কেনা হয়। এসব গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, চালকের বেতন ও তেলের খরচও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে আটটি কমিটির জায়গায় ২৫টি কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সিটিং অ্যালাউন্স নিয়েছেন। এসব কমিটির মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অর্থের ৪৩ শতাংশের বেশি, অর্থাৎ ৪০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নিজেদের মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে এম এ কাসেমের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

