জাতিসংঘ কোনো মামলায় মৃত্যুদণ্ড চায় না। বাংলাদেশে গুমসহ গুরুতর অপরাধের বিচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র রাবিনা শামদাসানি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় গতকাল বুধবার এক বিবরণীতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুমের ঘটনার বিষয়ে জবাবদিহির পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে রাবিনা শামদাসানি ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সামরিক বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এরপর সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এক ডজনেরও বেশি কর্মকর্তা তাদের হেফাজতে আছেন।
জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ার জন্য তাঁদের বেসামরিক আদালতে উপস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গুমের জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হলো। এটি ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত।’
রাবিনা শামদাসানি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সর্বোচ্চ মানের ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহবান জানাই। এই ধরনের সংবেদনশীল মামলায় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা অপরিহার্য।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন- ‘গত বছরের প্রাণঘাতী ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে আমাদের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল—যাঁরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাঁদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। আমরা কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই, যেন অন্যান্য বিচারাধীন মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।’
মুখপাত্র বলেন, ‘প্রত্যেক মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সুষ্ঠু নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা দরকার। গুমের শিকার হয়ে জীবিত ফেরত আসা ব্যক্তি এবং ভিত্তিহীন অভিযোগে আটক থাকা সাংবাদিক বা আগের সরকারের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া উচিত। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনো কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে মামলার মুখোমুখি।’
রাবিনা শামদাসানি আরো বলেন, ‘যেন কোনো মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হয়, সে জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি। ব্যক্তিগত জবাবদিহির পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য সঠিক পথ হবে—সত্য উদঘাটন, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অতীতের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস স্বীকার করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, যেন এ ধরনের ঘটনা আর কখনো না ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘চলমান উদ্বেগগুলো দ্রুত আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে সমাধান করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানাই।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে গুমের অপরাধকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।