বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩০টি প্রস্তাবনার মধ্যে আটটি বাস্তবায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর ২৮ থেকে ৩৭ দফায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বেশ কিছু সুপারিশ। বাকি প্রস্তাবগুলো নির্বাহী বিভাগের আদেশ প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে বাস্তবায়নের ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের সদস্য ও সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন। তিনি বলেন, “আমাদের করা অনেক প্রস্তাব এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে কিছু প্রস্তাব যুক্ত হলেও বাস্তব পদক্ষেপ ধীর। বিএনপি ও অন্যরা আপত্তি জানায়নি, কিন্তু বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না কেউ।”
২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের কার্যক্রম শেষ হয়। অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে কমিশন ৩০টি সংস্কার প্রস্তাব করে। ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ৩৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনপ্রধান। তখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন।
ইতিমধ্যে যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
- সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন গঠন
- আদালতে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন
- নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ
- আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলায় অন্য পক্ষে আইনজীবী নিয়োগে বাধা দূরীকরণ
- আইনগত সহায়তার সঙ্গে মধ্যস্থতা কার্যক্রম যুক্তকরণ
- দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন সংশোধন
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের আরেক সদস্য ব্যারিস্টার তামিন হোসেন শাওন বলেন, “অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে স্বতন্ত্র সচিবালয় আইন নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে, শুধু চূড়ান্ত অনুমোদন বাকি। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন পৃথক করা হয়েছে, অধস্তন আদালতের পদ সৃষ্টি করার ক্ষমতা বিচার বিভাগকে দেওয়া হয়েছে—এগুলো বড় অগ্রগতি।”
তবে তিনি জানান, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের খসড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জুলাই জাতীয় সনদেও কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাব যুক্ত হয়েছে। ব্যারিস্টার শাওন আরও বলেন, “এই সরকার কিছু ভৌত অবকাঠামোর কাজ শুরু করতে পারবে, যেমন ঢাকা কোর্ট ভবন সংস্কার, কিন্তু শেষ করতে পারবে না। বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের কাজ চলছে। মামলা ব্যবস্থাপনা সংস্কারে সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের অনেক প্রস্তাব আছে, কিন্তু প্রধান বিচারপতি কোনোটি বাস্তবায়ন করেননি। যদি আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট কমিশনের সঙ্গে বসে আলোচনায় যেত, তাহলে বাস্তবায়ন আরও এগোত।”
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- উপজেলায় আদালত সম্প্রসারণ
- বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ
- সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয়
- বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন
- অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়োগে পরামর্শ ব্যবস্থা
- স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন
- স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা
- দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ গঠন
- বাণিজ্যিক আদালত স্থাপন
এইসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বিচার বিভাগ আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনগণের আস্থাভাজন হবে বলে আশা কমিশন সদস্যদের।

